আপনি পড়ছেন

পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা ফরজ মনে করে স্ত্রীদের মহর আদায় করো।’ লজ্জাজনক সত্য হলো, ‘দিতে হবে না কিংবা মাপ চেয়ে নেবো’ নিয়ত করেই আজকাল মহর নির্ধারণ করা হয়। আল্লাহর বিধানের সঙ্গে ছলচাতুরির এরচেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে! অবশ্য এ জন্য সমাজের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গীও কম দায়ী নয়।

marriage in islam

বিয়ের মতো একটি পবিত্র-আধ্যাত্মিক বন্ধনও আজ লোকদেখানো প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। ফলে পরিবারগুলো থেকে সুখ-শান্তি উবে গেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে আদায় না করার নিয়তে মহর নির্ধারণ করলো, কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে তাকে ব্যভিচারী ও চোর হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। (কানজুল উম্মাল)। 

হানাফি মাজহাব মতে, দশ দিরহামের কম মহর নির্ধারণ করা যাবে না। ইমাম শাফেয়ির মতে, এরচেয়েও কম নির্ধারণ করা জায়েজ। তবে মহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণের ব্যাপারে ইসলামের কোনো সীমারেখা নেই। পবিত্র কোরআনে সূরা নিসার ২০ নম্বর আয়াতে আল্লহ বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের প্রচুর অর্থবিত্ত মহরানা দিলেও তা ফিরিয়ে নিও না।’

রাসুল (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদিনদের স্ত্রীদের মহরানার পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠে যায়। আল্লামা ইবনে আরাবি লিখেছেন, রাসুল (সা.) উম্মে হাবিবাকে চারশ’ স্বর্ণমুদ্রা এবং হজরত ওমর (রা.) উম্মে কুলসুমকে চল্লিশ হাজার দেরহাম মহরানা দিয়েছিলেন! (আহকামুল কোরআন, ১ম খন্ড, ৩৬৪ পৃষ্ঠা)।

মহরানা একটি ফরজ দান। সামর্থ্য থাকলে তা বেশি করাই উত্তম, তবে লোকদেখানোর জন্য হলে তা রীতিমতো অন্যায়। জাহেলি যুগে মেয়েপক্ষ বিপুল পরিমাণ মহরানা ধার্য করত। মহরানা বাড়ানোর জন্য দরকষাকষি চলত। এ নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে ঝগড়াঝাটি, মনমলিন্য এমনকি খুন-খারাবিও হতো। কখনো কখনো বিয়ে ভেঙে যেত।

islamic couple

ফলে রাসুল (সা.) বলেছেন, উত্তম মহর হলো যা সহজে আদায় করা যায়। (আবু দাউদ)। তিনি আরো বলেছেন, একজন বরকতপূর্ণ নারী সে, যার মহর কম। (কানজুল উম্মাল)।

মাওলানা আবদুর রহিম লিখেছেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি ঠিক, কিন্তু মহরানার বিষয়ে আজও জাহেলি যুগের ধ্যান-ধারণাই লালন করছি। হজরত ওমর (রা.) এর সময়ে মহর নির্ধারণের ব্যাপারে খুব বাড়াবাড়ি করা হতো। একদিন তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘সাবধান! মহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। সামর্থ্যের বাইরে মহর নির্ধারণের ফল কখনোই শুভ হয় না। এতে করে স্বামী নিজের স্ত্রীকেই শত্রু ভাবতে শুরু করে। (তিরমিজি)।

ঘৃণ্য মহরবাণিজ্যের একটি চটকদার যুক্তি হলো, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য বেশি মহর নির্ধারণ করা হয়। এতে করে নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি সম্পর্কের বাঁধনও মজবুত থাকে।

এ যুক্তির জবাবে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী বলেন, যে সম্পর্ক শুধু মহরের কারণে টিকে থাকে তা আর যাই হোক সুখী দাম্পত্য নয়। মহরের কারণে টিকে থাকা সম্পর্কের চেয়ে তালাক অনেক উত্তম। যে স্বামী মহরের ভয়ে স্ত্রীকে তালাক দেয় না, সে তালাকের চেয়েও ভয়ানক যন্ত্রণায় স্ত্রীর জীবন বিষিয়ে তোলে। (মুসলিম বর কনে, ১৫৪ পৃষ্ঠা)।

মহরবাণিজ্যের আরেকটি যুক্তি হলো, অনেক মেয়েপক্ষকে বলতে শোনা যায়, আমার মেয়ের দাম কি এতই কম? এর জবাবে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী এবং মাওলানা আবদুর রহিমের আলোচনার সারমর্ম হলো, সন্তান সম্পর্কে আপনার মানসিকতা এত নিচু? পিতা বা অভিভাবক হিসেবে আপনার লজ্জা হওয়া উচিত!

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পণ্য নয়। মহরানা নারীর মূল্য নয়, উপহার। হায়! যারা সন্তানকে মহরানার বিনিময়ে বিক্রি করতে চান, তাদের মুখে সম্মান ও মর্যাদার বুলি শুনে শয়তানও হাসে!

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর