আপনি পড়ছেন

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা, সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কওমি মাদরাসা। এসব মাদরাসা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইলমে দ্বীনের বড় খেদমতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কওমি মাদরাসা প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান- এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। কওমি মাদরাসার বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো জনগণের অনুদানে চলে। সরাকারি কোনো অনুদান গ্রহণ করা হয় না।

madrasha

আজকের বাজারেও একজন কওমি শিক্ষকের বেতন সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই অল্প টাকাতেও ঘর-সংসার, চিকিৎসা, বাবা-মা এক কথায় সব খরচ চালাতে হয় একজ কওমি শিক্ষককে। কীভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নই করা হয়েছিলো কয়েকজন কওমি মাদরাসার শিক্ষককে।

চাঁদপুর জেলার নামকরা একটি কওমি মাদারাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আল আমিন হোসাইন উত্তরে বলেন, একটা সময় ছিলো যখন বাজার দর কম ছিলো। তখন কওমি শিক্ষকদের বেতন ছিলো চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এখন জিনিসপত্রের দর লাগাম ছাড়া। এই বাজারে আমি বেতন পাই ৯ হাজার টাকা। মাদরাসায় পক্ষ থেকে থাকা খাওয়া ফ্রি হওয়ায় বেতনের পুরো টাকাই সংসারে ব্যয় করি। কোনো সঞ্চয় তো থাকেই না বরং অনেক টাকা ঋণে আছি।

কুমিল্লার স্বনামধন্য কওমি মাদারাসার একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকেই মনে করেন হুজুরদের টাকায় বরকত আছে। বিশেষ করে মাদরাসার কমিটির লোকজন। এ জন্য আমাদের বেতন বাড়ানোর কথা শুনলেই তাদের মুখ কালো হয়ে যায়। মাদরাসার মুহতামিমরাও (অধ্যক্ষ) সাধারণ শিক্ষকদের সুখ-দুঃখ নিয়ে তেমন একটা ভাবেন না।

একেকজন মুহতামিমের বেতন ৩০ থেক ৫০ হাজার টাকাও হয়। সাধারণ শিক্ষকদের এসব বৈষম্যের কথা বললে আমাদের চাকরি তো যাবেই, অন্য কোনো মাদরাসায়ও আমাদের সুযোগ দেওয়া হবে না।

কওমি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নতুন কিছু নয়। তবে অনেকেই মনে করেন এত অল্প টাকাতেই কওমি শিক্ষরা চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ নিয়ে রাজধানীর স্বনামধন্য কয়েকটি কওমি মাদরাসার তরুণ শিক্ষকদের সাথে কথা হয়।

kowmi madrasha

তারা বলেন, যে বেতন পাই তাতে কোনোদিক সামাল দিতে পারি না। স্ত্রী-সন্তানদের স্বাদ-আহ্লাদ কিছুই পূরণ করা সম্ভব হয় না।

কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন, যখনই অর্থের টান পড়ে শশুড়বাড়ি থেকে হাত পাততে হয়। এ যে কত বড় লজ্জা তা আর বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই।

কওমি শিক্ষকদের এমন দ্বীনহীন জীবনযাপনের কারণে মেধাবী কওমি শিক্ষার্থীরা এখন আর মাদরাসা কেন্দ্রীক ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে না। মাদরাসায় পড়েও তারা সাধারণ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক।

তবে ভবিষ্যত কওমি মাদরাসাগুলো মেধাবী শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদারাসা জামেয়া পটিয়ার সাবেক পরিচালক আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী বলেন, কওমি মাদরাসা কখনোই কারো ষড়যন্ত্রে কিংবা অর্থের অভাবে বন্ধ হবে না। কখনো যদি বন্ধ হয়- যোগ্য শিক্ষক-পরিচালকের অভাবেই বন্ধ হবে।

জনগণের অনুদানে প্রতিটি কওমি মাদরাসাতেই বড় বড় দালান, ভবন নির্মান হয়। সে দালানে বসে যারা দ্বীনের মেহনত করেন, তাদের জীবনে যদি সচ্ছলতা না আসে, তবে এ প্রশ্ন ওঠতেই পারে, মানুষের চেয়ে দালান বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় নি তো? এত বিশাল বিশাল দালান একদিন যেন শিক্ষক শূন্য হয়ে না পড়ে সে ব্যাপারটি এখন থেকেই দরদের সঙ্গে ভাবা উচিত কওমি সংশ্লিষ্টদের।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর