আপনি পড়ছেন

সূর্য ঠিক মাথার উপরে। আগুন বৃষ্টি হচ্ছে চারপাশে। পিচ ঢালা পথ উত্তপ্ত, যেন আগুনের ধোঁয়া বেরুচ্ছে। গরমে-ঘামে পোশাক ভিজে গেছে। শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত। হাঁটতে মন চায় না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলাম। গন্তব্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কোন রিকশাই যাবে না। ছায়ায় রিকশা থামিয়ে রিকশাওয়ালারা গরমে ছটফট করছে। কেউ যাবে না এই গরমে। আমি যেখানে হাঁটতে চাচ্ছি না, রিকশাওয়ালা সেখানে রিকশা চালাবে কিভাবে? বাতাস পর্যন্ত গরম হয়ে উঠেছে।

hot weather in bangladesh

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা খালি রিকশা পাওয়া গেল। সে যেতে রাজি হলো নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে কিছু বেশি টাকার বিনিময়ে। আমি ভাড়া বেশি চাওয়ার কারণ জানতে না চেয়ে উঠে পরলাম। আর ভাবতে লাগলাম, এমন দুযোর্গপূর্ণ উষ্ণ আবহাওয়াতে কতটা বাধ্য হলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে টেনে নিয়ে যেতে রাজি হয়? পুঁজির দেশে যে গরীব মানুষ জিম্মি!

রিকশা থেকে নেমেই বললাম, ‘এক গ্লাস লেবুর শরবত দেও তো।’ শরবত বিক্রেতা শরবত দিলে আমি শরবত নিয়ে দিলাম রিকশাওয়ালাকে। ভ্রুতে জমে থাকা ঘাম মুছে রিকশাওয়ালা তাকালো আমার চোখে।

বলল, ‘আপনি খাবেন না?’ বললাম, ‘খাচ্ছি’ । শরবত খাওয়া শেষে তাকে তার প্রাপ্য ভাড়া দিয়ে দিলাম। সবসময়ই যে, রিকশাওয়ালা যা চায় তাই ভাড়া দেই ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। অনেক সময়ই শাহবাগ থেকে টিএসসি নেমে ১৫টাকা ভাড়া দেই। আর রিকশাওয়ালা আরো ৫টাকার দাবি করে বসে। না পেয়ে শেষে বলে, ‘ওঠার সময় কইয়্যা লইছি না? ২০ টাকা ভাড়া?’ ইত্যাদি..। হাতে সময় থাকলে এই বাড়তি ৫টাকার উত্তর দেই এই বলে,‘ভাড়া কম দেওয়া যেমন জুলুম, ভাড়া বেশি চাওয়াও তেমনি জুলুম।’

যা হোক আমি মেডিকেলে একজন অপারেশন রোগিকে দেখতে যাচ্ছি। ‘ও আমার ভাইরে, আমার... কোথায় তুমি গেলা রে, আমারে..’

মরাকান্নার শব্দ শুনতে শুনতে আমি হেটে চলছি সামনের দিকে। প্রচণ্ড গরমে যখন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, ঢাকা মেডিকেলে তখন অসুস্থ মানুষ বদ্ধ দেয়ালে পড়ে আছে । বারান্দায় পায়ের কাছে শুয়ে কাঁতরাচ্ছে নানা শ্রেণি, বয়স ও পেশার মানুষ। তাদের মাথার উপরে একটা ফ্যান পর্যন্ত নেই। সাথে দুর্গন্ধ তো আছেই। যে কোন সুস্থ মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এই রোগ নিরাময় কেন্দ্রে।

মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে রোগ মুক্তি কেন্দ্রে এসে দেখলাম গণমানুষের কান্না, দুভোর্গ, ভোগান্তি, কষ্ট। পায়ের কাছে মানবতার আর্তনাদ! গরিব মানুষ খেটে মরে পুঁজির অভাবে। অসুস্থ হলে পড়ে থাকে পায়ের কাছে। কখনো হাসপাতালে কখনো ফুটপাতে। পুঁজিওয়ালারা আরামে যাত্রা করে, হাসপাতালে ভিআইপি কেবিনে থাকে। গণতন্ত্রের মন্ত্রে গণমানুষের মুক্তি আর কত দূর? ঐ শোনা যায়, গরিবের মরাকান্নার সুর...

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর