ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দুটি হাইমারস ধ্বংস করেছে রাশিয়া

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আটটি হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমের (হাইমারস) মধ্যে দুটি ধ্বংস করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ওলেক্সি রেজনিকভ হাইমারসকে ‘গেম চেঞ্জার’ অভিহিত করার একদিনের মাথায় বহুল আলোচিত অস্ত্রগুলোকে ধ্বংসের খবর জানালো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ২৮ জুন মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মার্কিন হাইমারস ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় বাহিনী

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কনাশেনকভ বলেছেন, মঙ্গলবার রাতে দোনেৎস্কের (পূর্ব ইউক্রেন) মালোতারানোভকা এলাকায় রাশিয়ার বিমান বাহিনী উচ্চমাত্রার লক্ষ্যভেদী ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আমেরিকান হাইমারস এমএলআরএসের দুটি লঞ্চার ধ্বংস করেছে। এসব লঞ্চারে ব্যবহারের জন্য রাখা গোলাবারুদের (রকেট) দুটি ডিপোও ধ্বংস হয়েছে।

এর আগে সোমবার হাইমারসকে গেম চেঞ্জার অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ। রাশিয়ার সঙ্গে রণক্ষেত্রে হাইমারস ইউক্রেনের অনুকূলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক টুইটে হাইমারসের ছবি সংযুক্ত করেন তিনি।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে ট্যাগ করে রেজনিকভ তার পোস্টে লেখেন- ‘মার্কিন জনগণের প্রতি হ্যাপি ইনডিপেনডেন্স ডে। ইউক্রেনের জনগণ আমাদের মুক্তির সংগ্রামে আপনাদের সমর্থনের কথা চিরদিন স্মরণ রাখবে। বোধ করি এ সমর্থনের সেরা উদাহরণ হাইমারস, যা ফ্রন্টলাইনে গেম চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য সহকর্মী লয়েড অস্টিনকে ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনাদের আশীর্বাদ করুন।’

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলোর সরবরাহকৃত অস্ত্রের মধ্যে অন্যতম আলোচিত হাইমারস। মার্কিন সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি হাইমারস হচ্ছে ডেডেকিটেড ট্রাকের উপর বসানো এক ধরণের রকেট লঞ্চার সিস্টেম। প্রতিটি হাইমারস প্ল্যাটফর্ম একসঙ্গে ছয়টি লক্ষ্যনিবিষ্ট রকেট (গাইডেড মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম-ডিএমএলআরএস) ছুঁড়তে পারে। এর মধ্যে প্রতিটি রকেট ৪৩ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

রাশিয়ার জয়েন্ট সেন্টার ফর কন্ট্রোল অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন অব সিজফায়ারের একটি সূত্রের বরাতে প্রাভদা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া হাইমারস গত ২৮ জুন মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে ইউক্রেন। ওইদিন লুহানস্কের পেরভালস্ক এলাকায় হাইমারস থেকে এম১৪২ গোলাবর্ষণ করা হয়।

গত ২৩ জুন ইউক্রেনকে চারটি হাইমারস সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে সরবরাহ করা হয় চারটি হাইমারস। যুদ্ধের ব্যাপ্তি ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে আটটি হাইমারস কম মনে হলেও রকেট আর্টিলারি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, মার্কিন হাইমারস ইউক্রেনীয় বাহিনীর পালে হাওয়া লাগাতে সক্ষম হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাইমারস লঞ্চারে পারমাণবিক ওয়ারহেড সংযোজন করা সম্ভব। কনভেনশনাল বা প্রথাগত গোলার মধ্যেও হাইমারসে ৪৩ কিলোমিটারের চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার গোলা বহন ও বর্ষণ করা সম্ভব। তবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হাইমারসে কেবলমাত্র ৪৩ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যভেদের কনফিগারেশন রাখা হয়েছে। যদিও এ ৪৩ কিলোমিটার রেঞ্জের রকেট যুদ্ধক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেছেন অনেক বিশ্লেষক।

টোওড আর্টিলারি বা গাড়িতে বেঁধে টেনে নেওয়া কামানের সঙ্গে হাইমারসের পার্থক্য হলো এর হাই মোবিলিটি বা উচ্চমাত্রার চলিষ্ণুতা। স্বচালিত আর্টিলারি হওয়ায় হাইমারস যে কোনো সময় গোলাবর্ষণের পরপরই স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র সরে যেতে পারে। এতে করে শত্রুপক্ষের প্রত্যাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকি তো থাকেই না, উল্টো দ্রুত একের পর স্থান পরিবর্তন ও গোলাবর্ষণের মাধ্যমে শত্রুকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত করতে পারে হাইমারস।

হাইমারসের প্রতিটি রকেট বা গোলায় থাকে একশ কেজি বিস্ফোরক। প্রতিটি রকেট যে কোনো ভবন ধ্বংস করতে, প্রতিপক্ষের সৈন্য সমাবেশের স্থলে বড় ধরণের প্রাণহানি ঘটাতে, এমনকি প্রতিপক্ষের কামান ও গোলাবারুদ ধ্বংস করতে সক্ষম।