সারা বছরই আজান শোনা যাবে যে মার্কিন শহরে

সন্ধ্যা গড়িয়ে এসেছে। মিনিয়াপোলিসের সিডার রিভারসাইড এলাকায় অবস্থিত ট্রিনিটি লুথারান চার্চ থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন নারী যাজক জেন বাকলি ফারলি। এমন সময় তার কানে ভেসে এলো সুমধুর একটি সুর। দাঁড়িয়ে গেলেন জেন বাকলি। শব্দটি খাড়া উচুঁ ভবনগুলোর দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। জেন বলেন, ‘আমি তন্ময় হয়ে শুনছিলাম, আমার কাছে মনে হচ্ছিল কোনো স্বর্গীয় সুর।’

সারা বছরই আজান শোনা যাবে যে মার্কিন শহরে

তিনি বলেন, প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কীসের শব্দ। একটি খেয়াল করতেই বুঝলাম, আজানের সুর ভেসে আসছে। মুসলিমদের নামাজের জন্য আহ্বান।’

বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে দিনে-রাতে পাঁচবেলা আজানের ধ্বনি ভেসে আসাটা স্বাভাবিক। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের একটি শহরে এতো উচ্চরবে আজানের ধ্বনি ভেসে আসা কিছুটা আশ্চর্যের বটে।

সেই আশ্চর্য ঘটনাই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে। এই শহরটিই সর্বপ্রথম মার্কিন শহর, যেখানে সারা বছরই আজানের ধ্বনি শোনা যাবে।

মিনিয়াপোলিসের মসজিদগুলোতে এতোদিন শুধু পবিত্র রমজান মাসে সকাল ও সন্ধ্যা -দুই বেলা আজান দেওয়ার অনুমোদন ছিল। তবে সম্প্রতি নগর কর্তৃপক্ষ বিপুলসংখ্যক মুসলিম বাসিন্দার কথা চিন্তা করে আইন পাস করেছে সারা বছরই আজান দেওয়ার।

মিনিয়াপোলিস শহরটি প্রায় দুইশ বছর আগে থেকেই অভিবাসীদের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে বড় একটি অংশ হচ্ছে সোমালি মুসলিম।

সিডার রিভারসাইড এলাকার একটি মসজিদের নাম দার আল হিজরাহ মসজিদ। আজানের শব্দ যাতে আশপাশের এলাকা থেকে শোনা যায়, সেজন্যই এই মসজিদের ছাদে বসানে হয়েছে বিশাল সাইজের লাউড স্পিকার।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মুসল্লি জামাল ওসমান বলেন, মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য এটি সম্মানের। আগে সোমালিয়ার মসজিদ থেকে আযান ভেসে আসত। এই মার্কিন শহরেও আজানের শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠি। মনে হয় আমরা বাড়িতেই আছি।

দার আল হিজরাহ মসজিদের ইমাম মৌলিদ আলী বলেন, এই আজান আমাদের আত্মপ্রত্যয় বাড়িয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয়, আমাদের অধিকার আছে, আমরা এখানকারই মানুষ।

এই মসজিদের অদূরেই ট্রিনিটি লুথারান চার্চ। মসজিদের ঠিক পাশের ভবনটিতে রয়েছে একটি ছোটখাটো বার। কাছাকাছি রয়েছে একটি কলেজ ভবন। কাছাকাছি রয়েছে একটি পার্ক।
আজানের শব্দ নিয়ে ভিন্নধর্মীদের কোনো বিরক্তি বা অভিযোগ নেই।

যাজক জেন বাকলে ফারলি বলেন, আজানের ধ্বনি আমার ভালোই লাগে। এটা মনে করিয়ে দেয়, আমরা যতটা ভাবি, সৃষ্টিকর্তা তারও চেয়ে বড়-মহান।

সব মিলিয়ে নানা জাতি, নানান সংস্কৃতির মানুষ মিলেমিশে বাস করছেন শহরটিতে। চার্চের ঘণ্টাধ্বনি আর মসজিদের আজানের শব্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এই মিনিয়াপোলিসে।

সূত্র: আল জাজিরা ও পাইয়োনিয়ার প্রেস