বাংলাদেশে হিন্দি সিরিয়ালপ্রীতি ছাড়াচ্ছে তুর্কি নাটক

বাংলাদেশি নির্মাতাদের নাটক বেশ সমৃদ্ধ। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায়। তারপরও ভারতীয় সিরিয়ালগুলো র্দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের এক শ্রেণির দর্শক, বিশেষ করে নারীদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে গত পাঁচ-ছয় বছরে এ ট্রেন্ডে পরিবর্তন এসেছে। দর্শকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানে ওঠে এসেছে তুরস্কে নির্মিত বেশকিছু ঐতিহাসিক ও সামাজিক নাটক। খবর বিবিসি।

দিরিলিস: আতরুগ্রুল

মূলত ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত ‘সুলতান সুলেমান’ নামে একটি তুর্কি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচার করে। ইতিহাসভিত্তিক এই ধারাবাহিকে সম্রাট সুলেমান ও তার স্ত্রী হুররাম সুলতানের জীবনগাঁথা ও অটোম্যান সাম্রাজ্যের শাসনামলের বিভিন্ন চিত্র দেখানো হয়। সম্প্রচার শুরুর কয়েক মাসের মাথায় দেশের টিভি অনুষ্ঠানমালার তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে।

অবস্থা বিবেচনায় অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলও তুর্কি সিরিয়াল সম্প্রচার শুরু করে। অধিকাংশই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, তুরস্কের ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঘটনা অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটক ‘দিরিলিস: আরতুগ্রুল', ষোড়শ শতাব্দীর অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘সুলতান সুলেমান’ এবং সামাজিক নাটক ‘বাহার', ‘ফাতমাগুল' ও ‘ফেরিহা'।

হিন্দি সিরিয়ালের বৌ-শাশুড়ি কলহ, পারিবারিক সংঘাত, ঝগড়াঝাঁটি, পরকীয়া, জটিলতা দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ দর্শকরা তুরস্কের নাটকগুলোর মাঝে ভালো বিকল্প খুঁজে পান। গল্পের বৈচিত্র্য, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য, তুরস্কের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, আভিজাত্য, ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি রাজত্ব-রাজা আর শাসন ব্যবস্থার নান্দনিক উপস্থাপন, সংলাপ, অভিনয়সহ সার্বিক বিষয়গুলো দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।

দর্শকদের বক্তব্য , হিন্দি সিরিয়াল পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে দেখার মতো নয়। অন্যদিকে তুরস্কের সিরিয়াল অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন, ন্যায়বিচার, সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অনায়াসেই পরিবারের সবার সাথে বসে দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবা রহমান বলেন, কল্পকাহিনীর চাইতে মানুষের স্বভাবগতভাবেই ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ দেখার ও তথ্য জানার আগ্রহ বেশি। তুর্কি সিরিয়ালে মানুষ সেই খোরাক মেটাতে পারছে।

এছাড়া তুর্কি সিরিয়ালগুলো বেশ বড় বাজেটে নির্মাণ হয়ে থাকে, ব্যবহৃত হয় বিশ্বমানের প্রযুক্তি। এ কারণে সেটের নকশা, আলো প্রক্ষেপণ, শব্দ সম্পাদনা, অ্যাকশন পরিচালনা হয় বেশ উচ্চমানের। ভাষার ব্যবহারও অত্যন্ত সুনিপুণ ও মাধুর্যপূর্ণ। এপিসোডগুলো অযথা লম্বা করার প্রবণতা একদমই থাকে না। হিন্দি সিরিয়ালে যেটির উপস্থিতি প্রকট। তাছাড়া তুর্কি নাটক এমন সব কাহিনীর ওপর নির্মিত, যার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

সব মিলিয়ে দর্শকদের নতুন আগ্রহের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে তুরস্কের সিরিয়াল। বিপরীতে দীর্ঘদিনের বাধা দর্শক হাতছাড়া হচ্ছে হিন্দি সিরিয়াল নির্মাতাদের।