‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাষ্টের’ সেই চাকরির বিজ্ঞপ্তি ভুয়া!

শেখ ফারজানা আক্তার। একজন চাকরি প্রত্যাশী। বয়স ২৯ বছর। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যে কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখলেই এক বুক স্বপ্ন নিয়ে আবেদন করেন সেই চাকরির জন্য। ফারজানাসহ আরও অনেকেই আবেদন করেছিলেন ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাষ্টের’ চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে। কিন্তু তাদের সবাইকে হতাশ হতে হয়েছে। কেননা পত্রিকায় প্রকাশিত সেই চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি ছিল ভুয়া। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আজিজুল হাসান ওরফে এমরান, বিউটি আক্তার ও মো. কবির উদ্দিন পিয়াস

বিভিন্ন পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়েছিল গত মাসের ১৭ জুন। সেখান বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাষ্ট’ নামক প্রতিষ্ঠানে ১৯৪৪ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু আবেদনের শেষ তারিখের আগেই তাদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। অফিসের ঠিকানাও পরিবর্তন হয়। পালিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্য। প্রতারণার শিকার হন হাজার হাজার চাকরি প্রার্থী। হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।

অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আজিজুল হাসান ওরফে এমরান, বিউটি আক্তার ও মো. কবির উদ্দিন পিয়াস। বুধবার (১৩ জুলাই ) মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই বিজ্ঞপ্তি

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের নিকট তথ্য আসে কিছু অসাধু ব্যক্তি পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে মিরপুর জোনাল টিম। একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় এ চক্রটিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, এ অসাধু চক্রটি আমেরিকার বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ফেয়ারফ্যাক্স এর অর্থায়নে ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ নামে ৬৪৭২টি পদের বিপরীতে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট’ নামের প্রতিষ্ঠানে ১৯৪৪টি পদের বিপরীতে নিয়োগের জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

উভয় বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দেওয়া নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আগ্রহী প্রার্থীকে ১৫০-৫০০ টাকার পে-অর্ডার করতে বলা হয়। চাকরি প্রত্যাশীরা নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে আবেদন করলে কিছুদিন পর কোনো একটা কারণ দেখিয়ে সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে ঘোষণা দিয়ে ফের পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এভাবে তারা অভিনব কায়দায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে তারা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত উল্লেখ করে একটি ভুয়া নিবন্ধন নম্বরও ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হিসেবে মিরপুরের যে ঠিকানাটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও ছিল ভুয়া। ওই ঠিকানায় বসবাসকারী আমেরিকা প্রবাসী এ বিষয়ে কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বাস্তবে ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ ও ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট’ নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজত থেকে বেআইনিভাবে পরিচালিত ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ ও ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এই দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে গঠণতন্ত্র, কার্যনির্বাহী কমিটির ঘোষণা পত্র, প্যাড, প্রত্যয়ন পত্র, অংশীদারি চুক্তিনামা, পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, জরুরি নোটিশ, পে-অর্ডার, ভর্তি ফরম, ভিজিটিং কার্ড ও নগদ ১৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপি কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।