গভর্নরকে ধরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিচারকের অভিযান

অবৈধ অর্থ উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ উঠেছিল লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে গতকাল মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযান চালিয়েছেন দেশটির একজন বিচারক। খবর আরব নিউজ।

গভর্নর রিয়াদ সালামেহ

জানা গেছে, বিচারক ঘাদা আউন দীর্ঘদিন গভর্নর রিয়াদ সালামেহের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করছেন এবং গত মার্চ মাসে তার বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ উপার্জন এবং পাচারের অভিযোগ আনেন। সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, লিচেনস্টাইনসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও এ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে।

জার্মানি, ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্চের শেষ দিকে লেবাননের পাঁচজন অজ্ঞাত ব্যক্তির মালিকানাধীন ১৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করে। এর আগে ২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ৩৩০ মিলিয়ন ডলার এবং ৫ মিলিয়ন ইউরো আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে এই পাঁচজনের মধ্যে গভর্নর রিয়াদ সালামেহ এবং তার ভাই রাজা আছেন।

অভিযান চলাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাহারায় এক নিরাপত্তাকর্মী

রিয়াদ সালামেহ প্রায় তিন দশক ধরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন। ৭১ বছর বয়সী এই গভর্নর এখনও লেবাননের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের সমর্থন লাভ করেন। তবে লেবাননের অনেকে দেশটির অথনৈতিক সংকটের জন্য সালামেহের কিছু নীতিকে দায়ী করেন। বলা হয়, তার এসব নীতির কারণে দেশটির জাতীয় ঋণ অনেক বেড়ে গেছে এবং লেবাননের পাউন্ড ডলারের বিপরীতে ৯০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে।

গতকাল বিচারক আউন নিরাপত্তার কর্মীদের নিয়ে বৈরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দফতরে পৌঁছেন এবং সালামেহের সন্ধানে তল্লাশি চালান। তবে তিনি শেষপর্যন্ত সালামেহকে খুঁজে পাননি। এর আগে নিরাপত্তা বাহিনী সালামেহের বাড়িতেও অভিযান চালায়, কিন্তু তাকে সেখানেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এক বিবৃতিতে এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বিষয়টিকে সমস্যাগ্রস্ত দেশের স্পর্শকাতর ইস্যুতে একটি নিষ্ঠুর পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে মামলাটির সমাধান এবং তারপর যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

গত জানুয়ারিতে লেবাননের একটি দুর্নীতিবিরোধী গোষ্ঠীর দায়ের করা মামলায় সালামেহের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিলেন বিচারক আউন। কিন্তু তিনি উপস্থিত না হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছিল।

এদিকে অভিযোগ ওঠে, ফ্রান্সে রিয়েল এস্টেট কেনার জন্য সালামেহের ভাই রাজা ইউক্রেনের নাগরিক আনা কোসাকোভার সাথে তিনটি ভুয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এ অভিযোগে গত মার্চে রাজাকে আটক করা হয় এবং মে মাসে ৩৭০ কোটি ডলার মূল্যের রেকর্ড জামিনে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

উল্লেখ্য, লেবানন দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। দেশটির জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যসীমার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।