শপথের দিনেই রনিলকে তাড়ানোর ঘোষণা বিক্ষোভকারীদের

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দেশটির অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই শপথ নিলেন ছয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া রনিল। তবে দেশটির বিক্ষোভকারী জনতা তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিচ্ছেন না। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা।

রনিল বিক্রমাসিংহে

নির্বাচিত হওয়ার পরপরই রনিলকে তাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে কলম্বোর গোতাগোগামায় অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা বলছেন, রনিল আমাদের প্রেসিডেন্ট নন।

শ্রীলঙ্কায় গত দুই মাস ধরে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছে রাজাপাকসে পরিবার। পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রথমে মালদ্বীপ ও পরে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন মাত্র দুইমাস আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়া রনিল বিক্রমাসিংহে।

এরপর গতকাল বুধবার পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটে গোতাবায়া রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হন রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে তাকে প্রেসিডেন্ট মানতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। তার বিরুদ্ধে রাজাপাকসে পরিবারে সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আগে থেকেই। তাই আজ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেও রনিলকে হটাতে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেছে।

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম ইন্টার ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ফেডারেশনের নেতা ভাসান্তা মুদালিগে বলেন, পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের কাছে নতুন নন। তিনি ও তার দল দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য দায়ী।

বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে তিনি বলেন, এই প্রেসিডেন্ট জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসেননি। তাই তিনি আমাদের প্রেসিডেন্ট নন। তিনি রাজাপাকসে পরিবারের কর্মচারী। বিক্ষোভে ছাত্রদের পাশাপাশি বৌদ্ধি ভিক্ষু, ক্যাথলিক যাজক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ যোগ দিয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের একজন জগৎ মানুবর্না বলেন, আমরা গোতাবায়াকে তাড়িয়ে দিয়েছি, রনিলকেও তাড়াবো। ৭০ লাখ ভোটার আমাদের সঙ্গে। রনিল বিক্রমাসিংহেকে জানা উচিত, পার্লামেন্টের ১৩৪ ভোটের চেয়ে আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ক্ষমতা আকড়ে ধরে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে ডুবিয়ে দেওয়া রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে আতাঁত করেই ক্ষমতায় এসেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

জ্বালানি সঙ্কট ও দুর্নীতির প্রতিবাদে গত মে মাসে বিক্ষোভ শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। একপর্যায়ে একে একে পদত্যাগ করেন দেশটির মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এরপর সংসদে মাত্র একটি আসন থাকা ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসান মাহিন্দার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া।

তাতে অবশ্য জনরোষ কমেনি। তুমুল বিক্ষোভের মুখে গত সপ্তাহে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ ও পরে সিঙ্গাপুরে যান গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার বসিয়ে দিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী রনিল প্রথমে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং পরে পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।