মিয়ানমারের আপত্তি নাকচ, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করবে আন্তর্জাতিক আদালত

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার নিয়ে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তি নাকচ করে দিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আদালত আজ শুক্রবার এক সিদ্ধান্তে বলেছেন, গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয় দেশ যেহেতু ১৯৪৮ সালের গণহত্যাবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তাই রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের এখতিয়ার গাম্বিয়ার রয়েছে।

আইসিজের সিদ্ধান্ত পড়ে শোনান মার্কিন বিচারক জোয়ান ই ডোনোয়ি ছবি: এপি

আইসিজের এ সিদ্ধান্তের ফলে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারে আদালতের এখতিয়ার প্রতিষ্ঠিত হলো এবং দীর্ঘদিন ধরে অপরিসীম নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম হলো। আদালত এখন গাম্বিয়ার দায়েরকৃত অভিযোগের প্রমাণ শুনানি অব্যাহত রাখবেন।

আইসিজের সিদ্ধান্তের সারাংশ পড়ে শোনাতে গিয়ে আদালতের সভাপতি মার্কিন বিচারক জোয়ান ই ডোনোয়ি বলেন, ১৯৪৮ সালের গণহত্যাবিরোধী জাতিসংঘ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী যে কোনো রাষ্ট্রপক্ষ একই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অপর কোনো রাষ্ট্রপক্ষের দায় প্রতিষ্ঠায় অত্র আদালতে অভিযোগ ও বিচার প্রক্রিয়া সূচনা করতে পারেন।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের পক্ষের আইনজীবীরা এ বিচারের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, জাতিসংঘের বৈশ্বিক আদালত কেবলমাত্র বিবদমান রাষ্ট্রপক্ষগুলোর মধ্যকার মামলার শুনানি করে থাকে এবং রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া অভিযোগ দায়ের করেছে। এ অবস্থায় গাম্বিয়ার অভিযোগটি খারিজ করে দেওয়া উচিত।

মিয়ানমার আরও দাবি করেছিল, মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে গাম্বিয়ার যেহেতু সরাসরি সংযোগ নেই এবং দেশটির সঙ্গে মিয়ানমারের যেহেতু আগে কোনো আইনি বিরোধ ছিল না, তাই আফ্রিকার দেশটি এ সংক্রান্ত অভিযোগ আইসিজেতে আনতে পারে না।

মিয়ানমারের আইনজীবীদের বক্তব্যের জবাবে গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী দাউদা জালো বলেছিলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার অব্যাহত থাকা চাই কারণ এ সংক্রান্ত অভিযোগটি ওআইসি নয়, গাম্বিয়া দায়ের করেছে।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে কেবলমাত্র বিভিন্ন রাষ্ট্রপক্ষের মধ্যকার বিরোধ ও অভিযোগের বিচার করে থাকে এবং রাষ্ট্রপক্ষের দায় নির্ণয় করে থাকে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধে ব্যক্তির দায় নির্ণয় করে থাকে। দুটি আদালতই নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত। রোহিঙ্গা গনহত্যায় মিয়ানমারের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দায় প্রতিষ্ঠায় আইসিসির কৌঁসূলীদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।