ষষ্ঠমাসে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১৫১তম দিন আজ। পাঁচমাস পেরিয়ে যুদ্ধ গড়াল ষষ্ঠমাসে। এই যুদ্ধে শক্তিধর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর। প্রাণ হারিয়েছেন হাজারো মানুষ। আর ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রায় এক কোটি ইউক্রেনীয় পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়ে নাম লিখিয়েছেন শরণার্থীর খাতায়।

ষষ্ঠমাসে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

এই যুদ্ধ কেবল ইউক্রেনেই ক্ষতিসাধন করেনি, যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়েই খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি  সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সঙ্কটে পড়েছে অনেক দেশ। তাই ঘুরেফিরে সবার মনেই এক প্রশ্ন, কবে থামবে এই যুদ্ধ?

ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। তখন ধারণা করা হচ্ছিল, পরাক্রমশালী রাশিয়ার আগ্রাসনে ক্ষুদ্র সামরিক শক্তির ইউক্রেন দাঁড়াতেই পারবে না। তাই অসম এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে শিগগিরই। কিন্তু শেষ হয়নি, এরইমধ্যে যুদ্ধের পাঁচ মাস শেষ হয়েছে। এ সময়ে ইউক্রেনের ডোনবাস অঞ্চল দখলে নিয়েছে রাশিয়া। মারিওপোলের মতো বন্দরনগরী হয়েছে হাতছাড়া। প্রতিদিনই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে ইউক্রেনের কোনো শহরের কোনো স্থাপনা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে বহু শহর ও স্থাপনা ধুলোর সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় এক কোটি ইউক্রেনীয়।

এই  যুদ্ধে যেমন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হচ্ছে, তেমনি প্রাণ হারাচ্ছে রুশ সেনারাও। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইউক্রেনে ১৫ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে।

শুরু থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়রা।  সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে পশ্চিমারা। রাশিয়াকে ঠেকাতে একের পর এক দেওয়া হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। তাতে যুদ্ধের তাপ কমেনি, বরং যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে গম ও ভুট্টার মতো খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সার উৎপাদন প্রায় বন্ধ। রুশ অবরোধের কারণে ইউক্রেনের খাদ্যশস্যও রপ্তানি বন্ধ হয়ে রয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট বেড়েছে।

সর্বশেষ শুক্রবার (২২ জুলাই) জাতিসংঘ ও তুরস্কের প্রচেষ্টায় খাদ্যশস্য পরিবহন পুনরায় চালু করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা পার না হতেই ওডেসা বন্দরে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এতে চুক্তির বাস্তবায়ন সন্দিহান হয়ে পড়েছে।

রাশিয়া একদিকে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে চালাচ্ছিল শান্তি আলোচনা। তবে সেই শান্তি আলোচনা পঞ্চম দফায় কোনো কার্যকারিতা আনেনি। তাই ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে, এ নিয়ে পাওয়া যাচ্ছে নানা মত। অনেকের আবার আশঙ্কা, এই যুদ্ধ দিয়েই শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

তবে পশ্চিমারা আশা করছেন, রাশিয়ার লড়াই-সক্ষমতা শিগগিরই হ্রাস পেতে পারে, অর্থাৎ যুদ্ধ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই সরে আসতে পারে মস্কো।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-১৬-এর প্রধান রিচার্ড মুর দাবি করেন, টানা যুদ্ধে দম ফুরিয়ে আসছে পুতিনবাহিনীর।

মার্কিন বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, ইউক্রেনে ধীর, কিন্তু অব্যাহত গতিতে এগোচ্ছে রাশিয়া। যেহেতু ইউক্রেনের হাতে পশ্চিমা অস্ত্র যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে। তাই এ যুদ্ধের সমাপ্তি শিগগিরই ঘটছে না।

তবে যুদ্ধ কতদিন চলবে, তা জানেন কেবল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি আগেই বলেছেন, লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত থামবে না রাশিয়া। সেই লক্ষ্য হয়তো, ক্রিমিয়ার মতো ইউক্রেনের কোনো অংশ রাশিয়ার মানচিত্রে নতুন করে জুড়ে দেওয়া!

সূত্র: আলজাজিরা ও বিবিসি