ট্রলের শিকার চীন, সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র

তাইওয়ানে মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বহুল আলোচিত সফরকে ঘিরে ট্রলের শিকার হচ্ছে চীন। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে চীনা কর্মকর্তাদের একের পর এক হুঁশিয়ারি পাত্তা না দিয়ে পেলোসি তাইওয়ানে পৌঁছার পর থেকে চীনকে ট্রল করতে ভুলেননি বেইজিংয়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়ার কর্মকর্তারাও। অন্যদিকে চীনের তীব্র আপত্তির পরও সফর অব্যাহত রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে আধ ডজনের বেশি দেশ।

আজ বিকেলে তাইওয়ান ছেড়ে যান ন্যান্সি পেলোসিসহ মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা

এর আগে এপ্রিল মাসে ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরের ঘোষণা দেওয়ার পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোরালো প্রতিবাদ জানায়। বেইজিংয়ে মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান, ওয়াং ওয়েনবিন, হুয়া চুনিং সম্ভাব্য সফরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদিনই সতর্কবার্তা দিতে থাকেন। কিছুদিন পর ন্যান্সি পেলোসি কোভিড আক্রান্ত হয়ে পড়লে সফরটি পিছিয়ে যায়, চীনা কর্মকর্তারাও থেমে যান।

গত মাসে ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান যাবার ইচ্ছার কথা আবারও জানালে চীনা কর্মকর্তারা আরেক দফা কথার তোপ ছাড়তে থাকেন। বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্ররা ছাড়াও ওয়াশিংটনে চীনা রাষ্ট্রদূত কিন গাঙ, বেলফাস্টে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ঝাং মেইফিং, কোরিয়া উপদ্বীপ বিষয়ক বিশেষ দূত লিয়াও জিয়াংমিন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান- প্রত্যেকেই রীতিমতো রুটিন করে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিতে থাকেন। এমনকি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে সফরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করতে ভুলেননি।

ট্রলের শিকার চীন, সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র

কেবলমাত্র মৌখিক হুঁশিয়ারি নয়, পেলোসির সফরের বিরুদ্ধে পরোক্ষ হুমকি হিসেবে তাইওয়ান প্রণালী, দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে বেশকিছু মিলিটারি হার্ডওয়্যার জড়ো করে চীন। এরপর শুরু হয় সামরিক মহড়া। যুদ্ধজাহাজ, বিমানবাহী রণতরী, ফাইটার জেট, মিসাইল- কিছুই দেখােেত বাকি রাখেনি বেইজিং।

চীনের উপর্যুপরি রণহুঙ্কার আর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক রণতরী আসতে দেখে শঙ্কিত হয়েছিল কোটি কোটি মানুষ। দুইপক্ষের বাকযুদ্ধ আর সমর-প্রস্তুতির মধ্যে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা নিয়ে পেলোসির এশিয়া সফরে নজর রেখেছে এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

উড্ডয়নরত উড়োজাহাজের অবস্থান-জ্ঞাপনকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটর‌্যাডার২৪ জানিয়েছে, তাইওয়ানে পৌঁছার আগমূহূর্তে পেলোসিকে বহনকারী বিমানটি অনুসরণ করেছে সাত লাখের বেশি মানুষ, যা ফ্লাইটর‌্যাডারের ইতিহাসে রেকর্ড। আর আজ বুধবার বিকেলে তাইপে থেকে ওড়ার সময় বিমানটিকে অনুসরণ করেছে ৭১ হাজার মানুষ।

পেলোসির বিমান মঙ্গলবার রাতে তাইপে বিমানবন্দরে অবতরণের পর থেকে চীনকে ট্রল করতে থাকেন অনেকে। পেলোসি ঘুঁষি মেরে শি জিনপিংকে ধরাশায়ী করেছেন আর তা দেখে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন তালি দিচ্ছেন, এমন একটি কার্টুন শেয়ার করেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলেছেন চীন একটি কাগুজে বাঘ ছাড়া কিছুই নয়।

চীনকে ট্রলের তালিকা থেকে বাদ যাননি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘চীনের শেষ হুমকির অর্থ কি, সেটা জানতে অপেক্ষায় ছিলাম। এক ঘন্টা সময় ছিল জানান দেওয়ার।’ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভ লেখেন, ‘শেষপর্যন্ত ওই প্রবীণ (পেলোসি) নিরাপদে তাইওয়ান এলেন। তাহলে তাকে ভয় দেখাতে এতো যুদ্ধজাহাজ, মিসাইল, একের পর এক হুমকি দিয়ে সারাবিশ্বকে তটস্থ রাখার কি দরকার ছিল।’

একদিকে যেমন চীনকে ট্রল করা হচ্ছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেরও অনেকে সমালোচনা করেছেন এমন সফরের মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য। রাশিয়া, ইরান, নিকারাগুয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, বলিভিয়া, কিউবাসহ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেলোসির সফরকে ‘উসকানিমূলক’ অভিহিত করে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।