চীন কেন তাইওয়ানের চিপ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। তবে তাইওয়ানের চিপ শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারটি পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে বেইজিং। চীন তাইওয়ান থেকে কিছু ফল ও মাছ আমদানি স্থগিত করেছে এবং দ্বীপটিতে প্রাকৃতিক বালি রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।

চীন কেন তাইওয়ানের চিপ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছে

তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরও বর্ধিত করতে পারে চীন, সেরকম একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ দ্বীপটিতে মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিবিদদের সফরের কারণে চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তবে চীন যে ধরনের নিষেধাজ্ঞাই দিক সেগুলো সরাসরি তাইওয়ানের চিপস সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করবে বলে তারা মনে করছেন না।

যদিও চীনকে প্রায়ই অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক জুলুম চালানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তবে এটি অতীতে নিষেধাজ্ঞা থেকে তার অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পণ্য বাদ দিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির উৎপত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে ২০২০ সালে চীন অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংস, ওয়াইন এবং বার্লি আমদানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারপরও বেইজিং ইস্পাতের তীব্র সংকট মেটাতে সে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ লোহা আকরিক আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

তাইওয়ানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক জবরদস্তিতে বেইজিংয়ের সর্বশেষ প্রচেষ্টা; তবে লক্ষ্যণীয়ভাবে তাইওয়ানের সবচেয়ে মূল্যবান সেমিকন্ডাক্টর খাত ছেড়ে দিয়েছে। এটির কারণ সম্ভবত তাইওয়ানের এসব পণ্যের রপ্তানির ওপর চীন ততটাই নির্ভর করে যতটা দ্বীপ নিজেই করে। বেইজিংয়ের জন্য তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে টার্গেট করা মানে নিজের ক্ষতি সাধন করা।

স্মার্টফোন এবং চিকিৎসা ডিভাইস থেকে শুরু করে গাড়ি এবং ফাইটার জেট সবকিছুতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর জন্য বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে তাইওয়ানের আধিপত্য। ট্রেন্ড ফোর্সের অনুসারে, স্ব-শাসিত দ্বীপটির মোট রাজস্বের ৬৪ শতাংশই আসে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন থেকে। বোস্টন কনসাল্টিংয়ের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে উন্নত সেমিকন্ডাক্টরগুলোর ৯২ শতাংশের উৎপাদনকারী তাইওয়ান।

তাইওয়ান তার মোট আয়ের ৭০ শতাংশ করে থাকে রপ্তানি থেকে। এর মধ্যে ৩৮. ৫ শতাংশ আসে ইলেকট্রনিক উপাদান থেকে, ৩৪.৮ শতাংশ মাইক্রোচিপ থেকে এবং ১৩ শতাংশ যোগাযোগ ডিভাইস থেকে। তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) বিশ্ব বাজারের অর্ধেকেরও বেশি চিপস তৈরি করে।

যেহেতু অন্যতম প্রধান কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারক হিসেবে বিশ্ব অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে তাইওয়ানের; তাই চিপ উৎপাদন খাতের বিষয়ে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া চীনের পক্ষে খুব বেশি অর্থবহ নয়, কারণ এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা তৈরি করবে, সবাই এতে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্প তাইওয়ানের নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের জন্য তাইওয়ানের কৌশলগত গুরুত্বকে বাড়িয়ে তোলে। যদিও বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞায় থাকা লেবু জাতীয় ফল এবং মাছ তাইওয়ানের অর্থনীতিতে ন্যূনতম প্রভাব ফেলবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে চিপ আমদানি বন্ধ অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। চিপের ক্ষেত্রে চীন তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল; কারণ চীনা কোম্পানিগুলো সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করতে পারলেও তাদের উৎপাদন করার ক্ষমতা সীমিত।

সম্প্রতি তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরকে কেন্দ্র করে গত ৪ আগস্ট থেকে তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালায় চীন। সেই মহড়া শেষ হয়েছে গত রোববার। তাইওয়ানকে ঘিরে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া শেষ হতে না হতেই ফের নতুন করে মহড়া চালানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। গত রোববার বেইজিং ঘোষণা করেছে এবার তারা ইয়েলো ও বোহাই সাগরে সামরিক মহড়া চালাবে।

সূত্র: এএনআই