তালেবানের এক বছর: বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল আফগানিস্তান

আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ের একবছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে নির্ভিক তালেবান যোদ্ধারা। এই একটি বছরে বহু সংকটের পাশাপাশি দেশটিতে বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আফগানিস্তান জুড়ে বিদ্যুতের হাহাকার চলছে। কোনো কোনো এলাকায় লাগাতার তিনদিনও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

তালেবানের এক বছর: বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের উত্তরে বালখ প্রদেশে নূর বখশ তার জমিতে পানি দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ জেনারেটর ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে তিনি জমিতে তুলা এবং তিল চাষ করেন। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন বিদ্যুৎ পেতাম। এখন তা খারাপ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। কখনও কখনও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হয়।

নূর বখশ বলেন, জেনারেটর এবং জলের পাম্প চালু করার জন্য আমাকে জ্বালানিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তা না হলে গ্রীষ্মের খরতাপে জমি এবং ফসল শুকিয়ে যাবে। আমরা বিদ্যুৎ ছাড়া দিন-রাত কাটাতে অভ্যস্ত। কিন্তু জমি তৃষ্ণার্ত, এর শক্তি দরকার। বিদ্যুৎ না থাকলে সেচ কিভাবে দেব।

খবরে বলা হচ্ছে, খরা ও বিদ্যুতের প্রাচুর্যতার ওপর ক্ষেতের ফলন নির্ভর করছে। দেশে যে বিদ্যুৎ সংকট চলছে, দুর্বল তালেবান সরকার তা কিভাবে মোকাবেলা করবে তা দেখার বিষয়। কিছুদিন আগেই উত্তর প্রদেশ জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত ছিল। কারণ মধ্য এশিয়া থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছিল।

গত বছর কয়েক দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটে। এতে নূর বখশের মতো অনেকেই আশা করেছিলেন, যুদ্ধের সমাপ্তি দেশে কিছুটা স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে। কিন্তু চরম বিদ্যুৎ সংকটে এখন নাকাল গোটা দেশ। ৫১ বছর বয়সী কৃষক নূর বখশ এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেড়েছে এবং উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।

আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুৎ তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ইরানসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসে। ২০ শতাংশেরও কম অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত হয়। তালেবান সরকার বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে লড়াই করছে।

আফগানিস্তানের বিদ্যুৎ বোর্ডের সাথে কাজ করা তালেবানের একজন সদস্য বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা নেই। আমরা দেশীয় সম্পদ দিয়ে দেশ চালাচ্ছি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক রিজার্ভ আটকে দেওয়ার ফলে সংকট আরও মারাত্মক হয়েছে।

জ্বালানি বিষয়ক আফগান বিশেষজ্ঞ মহসিন আমিন বলেন, সেবা খাত পূর্ববর্তী সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করেই চলছে। বেশিরভাগ প্রযুক্তি কর্মী তালেবান সরকারের সাথে থাকলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। সামগ্রিক রাজস্ব সংগ্রহে প্রভাব ফেলছে।