পরমাণু যুদ্ধ হলে বিশ্বে মানুষ মরবে ৫০০ কোটি!

আধুনিক বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধলে একদিকে বিস্ফোরণে যেমন প্রাণহানি ঘটবে, তেমনি অগ্নিঝড়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের যে আস্তরণ পড়বে, তাতে সূর্যালোক আটকে উৎপাদন ঘাটতিতে বিশ্বব্যাপী দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। আর সেই দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা যেতে পারে ৫০০ কোটি।

পরমাণু যুদ্ধ হলে বিশ্বে মানুষ মরবে ৫০০ কোটি

সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্রে এমন ভয়ানক পূর্বাভাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। গবেষণাপত্রটি নেচার ফুড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

ইউক্রেনে গত ছয় মাস ধরে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। ওই যুদ্ধ নিয়ে তীব্র বৈরিতায় জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এতে দুই পরাশক্তির মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়া নিয়েও জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। গত এপ্রিলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার ‘গুরুতর ঝুঁকি’ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন সবাইকে।

সেই আশঙ্কার মধ্যেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির রাটগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।

সম্ভাব্য রুশ-মার্কিন পারমাণবিক যুদ্ধসহ এমন ছোটবড় ছয়টি সংঘর্ষের ক্ষেত্রে বিশ্বে কী কী প্রভাব পড়বে, সেই ম্যাপিং করেছেন গবেষকরা।

তারা বলছেন, সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যেটি হতে পারে, সেটি হচ্ছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পুরোদস্তুর পারমাণবিক যুদ্ধ। এতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

গবেষকদের দাবি, বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যতজন মারা যাবে, যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে বিশ্বে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মরবে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, পরমাণু অস্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার পর সৃষ্ট অগ্নিঝড় থেকে বায়ুমন্ডলে যে পরিমাণ গাদ বা কার্বন ধূলি জমা হবে, তা হিসাব করেই প্রতিটি সংঘাতের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে গবেষকরা ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চের অনুমোদনপুষ্ট একটি জলবায়ু পূর্বাভাস টুল ব্যবহার করেছেন। এই টুলটি ব্যবহার করে গবেষকরা দেশ ধরে ধরে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যের উৎপাদনে কেমন বিরূপ প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাদ দিলে, তুলনামূলক ছোট কোনো পারমাণবিক যুদ্ধও বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।

যেমন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেও যদি কোনো ছোটখাটো পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যায়, সে কারণেও ৫ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক ফসল উৎপাদন আনুমানিক ৭ শতাংশ হ্রাস পাবে। আর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পারমাণবিক যুদ্ধে তিন- চার বছরের মধ্যে বিশ্বের ফসল উৎপাদন কমে যাবে ৯০ শতাংশ। তাতে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণের চেয়ে মানুষ মারা যাবে অনেকগুণ বেশি।

রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ্যার অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের সহ-লেখক অ্যালান রোবোক বলেন, গবেষণার তথ্য উপাত্ত আমাদের একটি ব্যাপারই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, সেটি হচ্ছে- পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতেই হবে, কখনোই যেন এমন যুদ্ধ না বাঁধে।