রাশিয়ার জ্বালানি তেল কিনতে কাজ করছে সরকার!

রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কিনতে অনেকটা এগিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, বিপিসি একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি তেল কেনা ও লেনদেনে মুদ্রার বিনিময় পদ্ধতি কী হবে, এসব প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে। এরইমধ্যে রুশ প্রতিষ্ঠান রসনেফটের প্রতিনিধিদের আলোচনা চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসার কথা।

জ্বালানি তেল

সূত্র জানিয়েছে, রুশ তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রসনেফট বাংলাদেশের কাছে প্রতি ব্যারেল ডিজেল ৫৯ ডলারে বিক্রি করতে চায়। সেক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে ১৫৯ লিটার এবং ডলার ৯৫ টাকা (আন্ত:ব্যাংক মূল্য) ধরে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়বে মাত্র ৩৫ টাকা।  

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে সংকটের এই মুহূর্তে এত সস্তায় জ্বালানি তেল পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তা কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) এই আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কম দামে তেল কিনতে পারলে লাভ বাংলাদেশের।

বুধবার (১৭ আগস্ট) প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিপিসিকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আলোচনা করছে রাশিয়ার সঙ্গে।’

না প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাশিয়ার রসনেফট প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা তাদের ঢাকায় আসতে বলেছি। তারা এলে আমরা আলোচনায় বসব।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাশিয়া থেকে কোন প্রক্রিয়ায় আসবে, জাহাজ ভাড়া কত পড়বে, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কোন মুদ্রায় পেমেন্ট হবে, পেমেন্ট ক্লিয়ার করতে হবে কতদিনের মধ্যে- এ ধরনের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

বাংলাদেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫-৭০ হাজার টন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৬১ লাখ টনের বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এরমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টনই আনা হয় পরিশোধিত তেল।

রাশিয়া থেকে কম দামে পরিশোধিত তেল পাওয়া গেলে তা কেনা উচিত বলেই মনে করেন জ্বালানি নীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম। তিনি বলেন, খরচ কম পড়লে আমাদের অবশ্যই পরিশোধিত তেল কেনা উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে যদি দাম কম হয় এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে মোট মূল্য যদি কম পড়ে, তাতে কিনতে দোষ কোথায়।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের রোষানলে পড়ে রাশিয়া। দেশটির ওপর নানান নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমারা। এতে রাশিয়ার তেল রপ্তানি কমে গিয়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানির ঘাটতি দেয়। বিভিন্ন দেশের মতো সংকটে পড়ে বাংলাদেশও। দেশে জ্বালানি দাম বৃদ্ধি ও সংকটে পড়ে একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-উৎপাদনও। এতে সার্বিকভাবে দেশে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি তৈরি হয়েছে অস্থিরতা।

এদিকে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি কমে যাওয়ায় এশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজতে শুরু করে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উত্তোলনকারী দেশটি। জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সস্তায় পেয়ে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে শুরু করে চীন ও ভারত।

একপর্যায়ে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) কেনার প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। দেশে রুশ ক্রুড পরিশোধন সক্ষমতা না থাকায় সেই প্রস্তাবে অগ্রসর হয়নি সরকার। তবে পরে গত সপ্তাহে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রসনেফট। এরপরই তেল কিনতে আগ্রহী হয় বাংলাদেশ।

গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে রুশ মুদ্রা রুবলে তেল কেনার কথাও বলেন সরকারপ্রধান। এরপরই বিষয়টিতে জোর তৎপরতা শুরু করে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়।