আপনি পড়ছেন

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সে সময়কার বিভিন্ন গানে ও স্লোগানে মুসলিম সম্প্রদায়ের অবদানের কথা সবিস্তার তুলে ধরেছেন বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। তিনি বলেন, আমরা রাজনীতির স্বার্থে স্লোগান দেবো, কিন্তু আবার ওইসব স্লোগানের রচয়িতাদের ভুলে যাব ও অপমান করব, এটা হতে পারে না। সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।

tejashwi nitish twsd বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব 

ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে মুসলিম উপস্থিতি মুছে ফেলার যে চেষ্টা চলছে, তার প্রতি কটাক্ষ করে তেজস্বী যাদব বলেন, ইতিহাস ভুলে যাওয়া অথবা ইতিহাসকে অস্বীকার করা কোনো শুভ রাজনীতি নয়। আমরা বলছি না যে আমরা সবকিছু জানি। কিন্তু আমাদের শেখার সুযোগ আছে ও জীবনভর শিখতে হবে।

বিহার বিধানসভায় বিরোধীদল বিজেপির বিধায়কদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা যা শিখেছি ও বুঝেছি সেটা আপনাদেরও জানতে হবে। জেনে রাখাটাই ভালো। আমরা সবপক্ষের কথা বলছি। কারণ ইতিহাস সবার। আপনারা কি জানেন, ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাকেশ শর্মা মহাকাশে গিয়েছিলেন। ফেরার পর ইন্দিরা গান্ধী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, মহাকাশ থেকে ভারত দেখতে কেমন? জবাবে রাকেশ শর্মা বলেন, সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা।

বিজেপির বিধায়কদের উদ্দেশে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী বলেন, মহোদয়, সারে জাহাঁ সে আচ্ছা, হিন্দুস্তান হামারা-- এই লাইন ‘তারানায়ে হিন্দ’ কবিতা থেকে নেওয়া। তারানায়ে হিন্দের রচয়িতা আল্লামা ইকবাল। এটা জানা দরকার। আপনারা আমরা সব ভাষণের শেষে জয় হিন্দ বলি। এই জয় হিন্দ স্লোগান লিখেছেন আবিদ হাসান সাফরানি।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের গড়ে তোলা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (আইএনএ) সদস্য থাকাকালে আবিদ হাসান সাফরানি জয় হিন্দ স্লোগান দেন। পরবর্তীতে এটা ভারতের দল-মত নির্বিশেষে সবার স্লোগান হয়ে ওঠে। তেজস্বী যাদব বিহার বিধানসভায় সে কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন।

বিজেপির প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জয় হিন্দ, সারে জাহাঁ সে আচ্ছা- এসব স্লোগানের সম্মান করা চাই। কিন্তু যারা এগুলো লেখেছেন, তাদের কেন আপনারা অপমান করবেন, ভাই? তাদের সম্মান করবেন না কেন? আমরা তো বিষয়গুলো আপনাদের জানিয়েছি। আপনারা যে তেরঙ্গা পতাকার (ভারতের জাতীয় পতাকা) কথা বলেন, সেটার নকশা করেছেন সুরাইয়া তৈয়ব।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলোয় অসংখ্য মানুষের বুকে দ্রোহের আগুন ও শক্তি জুগিয়েছিল একটি পংক্তি: সারফারোশী কি তামান্না আব হামারে দিল মে হ্যায়/ দেখ না হ্যায় জোর কিতনা বাজুয়ে কাতেল মে হ্যায় (অর্থ: আমাদের হৃদয়ে এখন দ্রোহের আগুন, দেখতে চাই খুনীর পেশীতে কত শক্তি আছে)।

সারফারোশী কি তামান্না এই পংক্তিমালা আবৃত্তি করে তেজস্বী যাদব বলেন, এটা কে লেখেছে, ভাই? লিখেছেন বিসমিল আজীমাবাদী। ইনকিলাব জিন্দাবাদ লেখেছেন মাওলানা হাসরাত মোহানী। সাইমন গো ব্যাক স্লোগান সবার আগে কার মুখে উচ্চারিত হয়েছিল, জানেন? ইউসুফ মেহের আলী সাহেবের মুখে।

তরুণ এ রাজনীতিক আরও বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবার অবদান আছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম তো এমন নয় যে সবাই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছে। এটা ছিল প্রেরণা দেওয়ার, চেতনায় শান দেওয়ার সময়। সে সময় স্লোগানগুলো কারা জুগিয়েছেন, মনে রাখতে হবে। তারা তো আমাদেরই মুরুব্বী, আমাদের ভাই, এই দেশের নাগরিক। এপিজে আবদুল কালাম না হলে কি ভারতে মিসাইল তৈরি হতে পারত?

তেজস্বী যাদব বলেন, আমাদের বিহারে মুসলমান মহাপুরুষদেরও স্মরণ করা চাই। ১৯৩৭ সালে বিহারের ইতিহাসে প্রথম প্রিমিয়ার হন মোহাম্মদ ইউনুস। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের পাল্টা তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন যিনি, তার নাম আবদুল কাইউম আনসারি। মাওলানা মজনুন হক ছিলেন বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী। সুফী মখদুম শাহ এখানেই জন্ম নিয়েছেন। বত্তক মিয়ার কথা স্মরণ করতে হবে। তিনি না থাকলে গান্ধী জীবিত থাকতেন না, ব্রিটিশরা গান্ধীকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। আমাদের জাতির পিতাকে যিনি রক্ষা করেছেন, তাকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

বিহার বিধানসভার সিংহভাগ সদস্য টেবিল চাপড়ে তেজস্বী যাদবের এ বক্তব্যকে সমর্থন জানান। সাড়ে সাত মিনিটের এ বক্তৃতার মাঝখানে কিছূটা সময় বিজেপি সদস্যরা হট্টগোলের চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.