দেদারসে লুট হচ্ছে সিরিয়া, ইয়েমেনের সম্পদ

বছরের পর বছর ধরে সংঘাতে এমনিতেই জেরবার অবস্থা সিরিয়া ও ইয়েমেনের। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ দুটিতে প্রাণহানি আর দখল-পুনর্দখলের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বেপরোয়া লুটপাটের খবর। দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে জ্বালানি চুরির অভিযোগ করছেন এসব দেশের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর এবার ফ্রান্সের নামও যুক্ত হয়েছে অভিযুক্তের তালিকায়।

দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে জ¦ালানি চুরির অভিযোগ করছেন এসব দেশের কর্মকর্তারা

বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, গত ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের দখলে থাকা সিরীয় ভূখণ্ড থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত জ্বালানি নিয়ে ৮৯টি তেলবাহী ট্যাংকার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে গেছে। এর ঠিক দুইদিন আগে সিরিয়া থেকে তেল নিয়ে ১৪৪টি ট্যাংকার একই পথে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটির দিকে যায়।

গত ৮ আগস্ট এক বিবৃতিতে সিরিয়ার তেল মন্ত্রণালয় বলেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সিরিয়ার দৈনিক গড় তেল উৎপাদন ছিল ৮০ হাজার ৩০০ ব্যারেল। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৬৬ হাজার ব্যারেল অর্থাৎ, মোট উৎপাদনের ৮৩ শতাংশই চুরি করেছে মার্কিন বাহিনী ও তাদের সহযোগী ভাড়াটে সৈন্যরা।

সিনহুয়া জানিয়েছে, ২০১৪ সালে সিরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্র সবার আগে দেশটির তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলে নিজেদের বাহিনী মোতায়েন করে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাসাকাহ ও পূর্বাঞ্চলীয় দ্বার আল-জুর তখন থেকে মার্কিন বাহিনীর দখলে। সিরিয়ার তেল ও গ্যাস সম্পদ চুরির বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম চেহারা বলে মন্তব্য করেছেন সিরীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার মোহাম্মদ আল-ওমারি।

এদিকে ইয়েমেন পেট্রোলিয়াম কোম্পানির (ওয়াইপিসি) মুখপাত্র এসাম আল-মুতাওয়াকিল লেবাননের আল-মায়েদীন টিভিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করার মতো যথেষ্ট তেল ও গ্যাস সম্পদ থাকলেও ইয়েমেন তার কোনো সুফল পাচ্ছে না। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট দক্ষিণাঞ্চলীয় শাবওয়াহ প্রদেশের বন্দরগুলোর মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে বিপিল পরিমাণ তেল পাচার করছে। একইভাবে পূর্বাঞ্চলীয় হাজারামওত প্রদেশের বন্দর ব্যবহার করে ইয়েমেনের তেল পাচার করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

বার্তা সংস্থা সাবা জানিয়েছে, শনিবার গ্রিসের পতাকাবাহী ট্যাংকার মারান কানোপুস ২০ লাখ ব্যারেল তেল নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় হাজারামওত প্রদেশের দাব্বা বন্দর থেকে চীনের শানদং প্রদেশের রিঝাও বন্দরের পথে রওনা হয়েছে। এর আগে ২৬ জুলাই আমিরাতের পতাকাবাহী ট্যাংকার গালফ ইটোস ৫ লাখ ব্যারেল তেল নিয়ে রুদুম বন্দর ছেড়ে যায়। একইভাবে মে মাসে অ্যাপোলাইটারেস নামের একটি ট্যাংকার প্রায় ২১ লাখ ব্যারেল তেল নিয়ে হাজারামওত প্রদেশের আশ-শাহর বন্দর ছেড়ে যায়।

ওয়াইপিসির মুখপাত্র এসাম আল-মুতাওয়াকিল অভিযোগ করেছেন, সৌদি ও আমিরাতি জোট নিজেরা তেল পাচারের পাশাপাশি ইয়েমের হুথি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দরগুলোতে যাতায়াতরত ট্যাংকার আটকেও লুন্ঠন চালাচ্ছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এ জোট প্রায় ১৫ হাজার জাহাজ আটকে সেগুলোতে বোঝাই পন্য লুট করে নিয়েছে।

এদিকে স্থানীয় দৈনিক আল-খাবার আল-ইয়ামানি জানিয়েছে, সৌদি আরব ও আমিরাতের পর এবার ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের তেল সম্পদে ভাগ বসাতে হাজির হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। গত ১৭ আগস্ট ইয়েমেনের ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকারের (এনএসজি) কর্মকর্তারা এক বৈঠকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মার্কিন ও ফরাসি বাহিনীর ‘সন্দেহজনক’ কর্মকা- নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে আমিরাত-সমর্থিত বাহিনীর সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড-সংশ্লিষ্ট ইসলাহ পার্টি ও সৌদি-সমর্থনপুষ্ট প্রেসিডেন্ট লিডারশিপ কাউন্সিলের (পিএলসি) যোদ্ধাদের সংঘর্ষ চলছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সন্ত্রাস দমনের জন্য সেনা মোতায়েন করেছে। একইভাবে ফ্রান্স সরকার চলতি সপ্তাহে শাবওয়াহ প্রদেশের বালহাফ এলএনজি টার্মিনাল ও সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তার জন্য ফ্রেঞ্চ ফরেন লিজিয়নের একদল সৈন্য মোতায়েন করেছে। ফরাসি কোম্পানি টোটাল এনার্জি বালহাফ টার্মিনালের মালিক।

গত ১৮ জুলাই ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর আবু ধাবি সফরকালে ফ্রান্স ও আরব আমিরাত কৌশলগত জ¦ালানি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি মাসে ইয়েমেনি দৈনিক আল-খাবার আল-ইয়ামানির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জঁ-মাহি সাফা ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তেল-সমৃদ্ধ শাবহওয়াহ প্রদেশে আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট গোত্রপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ফ্রান্স ও আমিরাতের যৌথ উদ্যোগে ওই এলাকায় এলএনজি উৎপাদন শুরু করার বিষয়ে তারা কথা বলেন।