ইরানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কে মামলা

১৯৮৮ সালে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীকে গণহত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত সপ্তাহে মামলাটি দায়ের করা হয়। খবর আরব নিউজ।

ইব্রাহিম রাইসি মামলার বাদীদের সংবাদ সম্মেলন

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৯৮৮ সালে তেহরানের এভিন ও গোহার্দশত কারাগারে অন্যায়ভাবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই ইরানের শাসনের বিরোধী ৩০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যা প্রক্রিয়ায় রাইসিও যুক্ত ছিলেন। ২০২১ সালের আগস্টে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

ইরানের ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেজিস্ট্যান্সের (এনসিআরআই) মার্কিন প্রতিনিধি সুনা সামসামি বলেন, ১৯৮৮ সালের গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এক ফতোয়ায় আদেশ দিয়েছিলেন, মুজাহিদিন-ই খালকের (এমইকে) সব সদস্য এবং এ সংগঠনের প্রতি যারা সহানুভূতিশীল ও অনুগত তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। পরের তিন মাসে মুজাহেদিন-ই খালকের হাজার হাজার সদস্যকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

ইব্রাহিম রাইসি মামলার বাদীদের সংবাদ সম্মেলন

গতকাল বৃহস্পতিবার সামসামি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমইকে ও এনসিআরআই ১৯৮৮ সালের গণহত্যার প্রথম দিন থেকে ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। চলমান শাসনের পতন না হওয়া পর্যন্ত এবং ইরানে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ন্যায়বিচারের জন্য এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। রাইসি ও ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা খামেনিসহ এই সরকারের অপরাধী নেতাদের বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের এ কার্যক্রম চলতে থাকবে।

মামলাটি দায়ের করেছেন, গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন এবং ওই সময় নিহত কয়েকজনের স্বজন। তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের নাগরিক আছেন।

মামলার একজন আইনজীবী স্টিভেন এম. স্নিবাউম বলেন, এই মাত্রার একটি অপরাধের জন্য, আজ পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। বিচারক ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

স্টিভেন বলেন, তিনি আশা করেন রাইসি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সিটিতে গেলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি ব্যক্তিগতভাবে দায়ের করা যাবে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সময় রাইসি তেহরানে একজন ডেপুটি প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং পুরো প্রক্রিয়ার সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত ছিলেন।

বাদীদের একজন বর্তমানে কানাডার নাগরিক আহমাদ হাসানি জানান, কিভাবে তার ভাই তেহরান ইউনিভার্সিটির ২১ বছর বয়সী ছাত্র মাহমুদকে কারাগারে নির্যাতন এবং ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, জাতিসংঘকে অবশ্যই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের এই প্রকাশ্য মামলার তদন্ত করতে হবে।

১৯৮০ এর দশকে ইরানের কারাগারে আট বছর অতিবাহিত করেছিলেন জানিয়ে মামলার অন্যতম বাদী ইরানি-আমেরিকান নাগরিক শীলা নিনাভাই বলেন, আমি যা দেখেছি এবং অনুভব করেছি তা এখনও আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না এবং সেসব স্মৃতি এখনো আমাকে কাঁদায়।

তবে সংবাদ সম্মেলনেই এ বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, রাইসির বিরুদ্ধে করা মামলাটি আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। কারণ ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে তিনি ছাড় পেয়ে যেতে পারেন।