বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইউক্রেনের জন্য ব্রিটেনের সাহায্য

‘যত লাগে সাহায্য করা হবে’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে এভাবেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিতে ভাটা পড়ছে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট, দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ে আগ্রহ হারানোসহ নানা কারণে এ বছরের শেষ নাগাদ বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইউক্রেনের জন্য দেওয়া ব্রিটেনের সাহায্য প্রবাহ। খবর আরটিওয়ার্ল্ড।

কিয়েভে জেলেনস্কির সাথে বরিস জনসন

গত রোববার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ সংকটের কারণে ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্যে রাশ টানতে পারে ব্রিটেন। চলতি বছরের শেষেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে দেওয়া লন্ডনের সাহায্য তলানিতে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই গত এপ্রিলে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। রুশ হামলা ঠেকাতে সবরকম ভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর কথাও ঘোষণা দিয়েছিলেন জনসন। এরপর আরও দুইবার জনসন কিয়েভ সফরে যান। প্রতিবারই উদারভাবে ইউক্রেনকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ সেনার হামলা শুরুর পরে এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে প্রায় ২৩০ কোটি পাউন্ড (২৭০ কোটি ডলার) সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দিয়েছে ব্রিটেন।

ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ব্যাপক হারে

ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে সানডে টাইমস দাবি করেছে, মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে ব্রিটেনের নিজের অবস্থাই খারাপ হতে চলছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে মূল্যস্ফীতি ১৮ শর্তাংশে পৌঁছে যেতে পারে। ফলে ইউক্রেনকে দেওয়া সাহায্যের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

এদিকে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা আগামী মাসে লিজ ট্রস বা ঋষি সুনাকের মধ্যে একজনকে দলীয় নেতা ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করতে ভোট দেবেন। বিজয়ী ব্যক্তিকেই চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হবে। ব্রেক্সিটের কারণে এমনিতেই দেশটি আগের বেশকিছু সুবিধা হারিয়েছে। এরপর করোনায় ধাক্কায় অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়ে দেশটি। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশটিতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। আসন্ন শীতেই জ্বালানির বড় ধরনের সংকটে পড়বে ইউরোপের প্রভাবশালী দেশটি। ফলে এ খাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে ব্রিটিশ নাগরিকদের। এ অবস্থায় ইউক্রেনে সাহায্য অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে লন্ডনের জন্য।

এছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকায় তাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্রিটিশরা। এই পটভূমিতে রাশিয়ার উপর ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা নীতির সমর্থন ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। মার্চ মাসে একটি জরিপে দেখা গিয়েছিল, নিজেদের কিছুটা সমস্যা হলেও ৪৮% ব্রিটিশ জনগণ রাশিয়ার উপর ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছে। তবে গত জুনে এ হারটি ৩৮ শতাংশে নেমে এসেছে। একইভাবে মার্চে দেখা গিয়েছিল, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ৪৯ শতাংশ লোক ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়টি সমর্থন করছে। জুনে এ সংখ্যাটি নেমে আসে ৪১ শতাংশে।