চে গুয়েভারার বড় ছেলের মৃত্যু

বিপ্লবী আর্নেস্তো চে গুয়েভারার বড় ছেলে কামিলো গুয়েভারা মার্চ আজ ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ কানাল এ কথা জানিয়েছেন। খবর এএফপি।

ভেনিজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট উগো শাভেজের সঙ্গে কামিলো গুয়েভারা (সাদা শার্ট পরিহিত)

এক বিবৃতিতে কিউবান প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমরা গভীর দুঃখ নিয়ে চে’র সন্তান ও তার আদর্শের প্রতিভূ কামিলো গুয়েভারাকে বিদায় জানাচ্ছি। চে সেন্টারের পরিচালক হিসেবে কামিলো তার পিতার কীর্তি সংরক্ষণে কাজ করে গেছেন। আমরা তার মা আলিদা, স্ত্রী ও কন্যা সন্তানদের পাশাপাশি পুরো গুয়েভারা মার্চ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

চে গুয়েভারার দ্বিতীয় স্ত্রী আলিদা মার্চের গর্ভে জন্ম নেওয়া দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে কামিলো দ্বিতীয়। তার বড় বোন হিলদা গুয়েভারা, ছোট বোন চেলিয়া গুয়েভারা ও আলিদা গুয়েভারা এবং ছোট ভাই আর্নেস্তো গুয়েভারা।

বিশ শতকের বিশ্ব রাজনীতিতে সাড়া জাগানো অন্যতম পুরুষ আর্নেস্তো গুয়েভারা দো লা সেরনা ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আর্জেন্টাইন ভাষায় বহুল ব্যবহৃত শব্দ চে। কথাবার্তায় চে শব্দটির অত্যধিক প্রয়োগে অভ্যস্ত আর্নেস্তোর নামের সঙ্গেই একসময় শব্দটি জুড়ে যায় এবং তিনি চে গুয়েভারা নামে পরিচিতি পান।

ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান চে পড়াশোনা শেষে হয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু মোটরসাইকেলে চড়ে লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি নিজের মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। ঔপনিবেশিক জনপদে মানুষের দুর্ভোগ দেখে তিনি সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর হন। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিউবার বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

সমাজতান্ত্রিক তাত্ত্বিক ও গেরিলা সমরকৌশলবিদ চে গুয়েভারা কিউবায় সফল সশস্ত্র বিপ্লবের পর দেশটির শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ পদে থাকাবস্থায় তিনি বিশ্বের বহু দেশ সফর করেন। আসেন ভারতে, এমনকি কলকাতায়। উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সংগ্রামের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে তিনি ক্রসেডের মহান যোদ্ধা সালাউদ্দীন আইয়ুবীর কবর দেখতে ফিলিস্তিনও সফর করেন।

অর্থনৈতিক সাম্য ও সমাজ রূপান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা চে একসময় কিউবার মতো বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে বলিভিয়ায় পাড়ি দেন। সেখানে মার্কিন সমর্থিত স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গেরিলা লড়াইয়ে থাকাবস্থায় তিনি বন্দী হন। পরবর্তীতে সিআইএ এজেন্টরা তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

৫৫ বছর আগে সিআইএ এজেন্টরা যখন বলিভিয়ায় চে গুয়েভারাকে হত্যা করে কামিলোর বয়স তখন পাঁচ বছর। আজীবন তিনি তার কীর্তিমান পিতার স্বপ্নের পক্ষে কাজ করেছেন। চে গুয়েভারার দৃষ্টিনন্দন ছবি নয়, মানুষ তার কথা ও আদর্শকে বুকে ধারণ করুক, এটাই ছিল কামিলোর স্বপ্ন।

কোনো ধরনের সরকারি পদ-পদবী ধারণ না করলেও কামিলো গুয়েভারা বরাবরই কিউবা ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে এবং আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি গুয়ানতানামো বেতে মার্কিন নির্যাতনকেন্দ্র ও দখলের অবসান, কিউবার উপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের কথা বলেছেন।

লাতিন আমেরিকা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চে’র সন্তান হিসেবে কামিলো গুয়েভারার পরিচিতি ছিল। ব্যক্তিগতভাবেও বামপন্থী ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অনেক কর্মী-সংগঠকের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। আজ দুপুরে মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে কামিলো ও তার কীর্তিমান পিতাকে স্মরণ করে নিজেদের আবেগ ও স্মৃতির কথা লিখেছেন।