পাকিস্তানের থ্রিলার জয়: বিদায় ভারত-আফগানিস্তান

এটাই পাকিস্তান। এ জন্যই তাদের বলা হয় অনুনমেয়। ১২৯ রানের সহজ লক্ষ্য কঠিন করে থ্রিলার জয় তুলে নিল বাবর আজমের দল। মামুলি পুঁজি নিয়েই পাকিস্তানের প্রায় দাঁত লাগিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। এবারের এশিয়া কাপে আরেকটি অঘটনের আশঙ্কা জাগিয়ে শেষ পর্যনত ব্যর্থ হলো আফগানযোদ্ধারা।

থ্রিলার জয়ে এবারের এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান

শেষ পর্যন্ত জিততে জিততে হেরে গেলেন রশিদ-নবিরা। আজ শারজাহতে শেষ ওভারের নাটকে এক উইকেটের মহানাটুকে জয় তুলে নিল পাকিস্তান। শ্বাসরুদ্ধকর এই জয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে উঠে গেলেন বাবর অ্যান্ড কোং। পাকবাহিনীর জয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল হট ফেভারিট ভারত ও জায়ান্ট কিলার আফগানিস্তান।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে ছয় উইকেটে ১২৯ রানের পুঁজি গড়ে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে উত্থান-পতনের পর চার বল বাকি থাকতে স্বস্তির জয় নিয়ে পাকিস্তান। ফজল হক ফারুকিকে পরপর দুই ছক্কা মেরে শেষ ওভারে ১১ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে তারা।

মামুলি পুঁজি নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে আফগানিস্তান

লো স্কোরিং ম্যাচে চার ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৩৯ রান। তিন ওভারে তা নেমে আসে ২৫ রানে। ১৮তম ওভারে দুই উইকেট চার রান দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন ফারুকি। শেষ ওভারে এসে তিনিই আবার ডোবালেন আফগানদের। এশিয়া কাপ থেকে রশিদ-নবিদের বিদায়টা এরচেয়ে নাটকীয় হতে পারতো না।

এই জয়ে এক ঢিলে কয়েকটি পাখি মারল পাকিস্তান। প্রায় অবিশ্বাস্য জয় দিয়ে দলটি কেটেছে ফাইনালের টিকিট। একই সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও উঠতি শক্তি আফগানিস্তানের বিদায় ঘণ্টাও বাজিয়ে দিল তারা। এমন ম্যাচে জয়ের পুরো কৃতিত্বটাই দিতে হবে পাকিস্তানের বোলারদের। আফগানদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেন তারা।

নাসিম-রউফদের দারুণ বোলিংয়ে ‘অল্প’তেই আফগানদের আটকে ফেলে পাকিস্তান। কিন্তু ব্যাটাররা এসে ম্যাচটা কঠিন করে দিয়েছেন। ১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ রানের মধ্যে বিদায় নেন অধিনায়ক বাবর ও ফখর জামান। ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে জোড়া ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই তৃতীয় উইকেটের পতন।

২৬ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান রিজওয়ান। তবে শাদাব খানকে নিয়ে ৪২ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন ইফতিখার। পাকিস্তান সহজে ম্যাচটা জিতে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু হারার আগে হারল না আফগানরা। ৮৭ রানে তিন উইকেট থাকা পাকিস্তান পথ হারাল আফগান তোপে। অলআউট এবং হারের আশঙ্কায় পড়ে তারা।

৩৩ বলে ৩০ রান করে বিদায় নেন ইফতিখার। ২৬ বলে ৩৬ রানে ফেরেন শাদাব। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারানো পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান আসিফ আলি। আট বলে ১৬ রান করে আউট হন তিনি। পরে দল জেতানোর দায়িত্ব ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা নাসিমের কাঁধে। চার বলে দুই ছয়ে ১৪ রানে অপরাজিত ইনিংসে নাটকীয় ম্যাচের ইতি টানেন নাসিম।

ম্যাচটায় শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতায় মার খেয়েছে আফগানিস্তান। তবে মামুলি পুঁজি নিয়ে তারা যেভাবে লড়েছে এতে কারে আফগানদের পিঠ চাপড়ে দিতে হবে। ফারুকি ও ফরিদ আহমেদ মালিক তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি শিকার রশিদ খানের। মুজিব উর রহমান উইকেট না পেলেও চার ওভারে ১২ রান দিয়ে পাকিস্তানকে পুরোদস্তুর চাপে রেখেছেন তিনি।

এর আগে টস জিতে সতীর্থদের হাতে বুল তুলে দেন পাক অধিনায়ক বাবর। বল হাতে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন সতীর্থরা। উইকেট পেয়েছেন ৫ বোলারই। ইনিংসের শুরু থেকেই চাপে রেখেছেন আফগানদের। পাক বোলিং তোপে দলটির প্রথম ৫ ব্যাটারই আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হওয়ার পর।

কিন্তু ফিফটি পাননি হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদ্রান, করিম জানাত, নাজিবুল্লাহ জাদ্রানের কেউ। তবে আফগানদের ইনিংসের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। শুরুতেই ঝড় তোলেন দলটির দুই ওপেনার জাজাই ও গুরবাজ। ঝড় থামতেই ছন্দপতন হয় দলটির।

চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ৩৬ রানে ভাঙে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। জাজাই ১৭ বলে ২১, গুরবাজ ১১ বলে ১৭, ইব্রাহিম ৩৭ বলে ৩৫, করিম ১৯ বলে ১৫ এবং নাজিবুল্লাহ ১১ বলে ১০ রানে আউট হন। শেষ দিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও রশিদ খানের সৌজন্যে মান বাঁচানো সংগ্রহ পায় আফগানরা।

ওমরজাই ১০ বলে ১০ এবং রশিদ ১৫ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ওভার শেষে ছয় উইকেটে ১২৯ রান করে আফগানরা। পাকিস্তানের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার হ্যারিস রউফ ২৬ রানে নেন দুই উইকেট। তবে চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে একটি শিকার করেন নাসিম শাহ। বোলাররা তাদের কাজটা করেছেন।

বাকি কাজ পাকিস্তানের ব্যাটারদের শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু দুঃসময়ে আবারো দলের ত্রাণকর্তারূপে হাজির হলেন বোলাররা। বিশেষ করে নাসিম। বল হাতেও জাদু দেখিয়েছেন তিনি। চার ওভারে ১৯ রানে নিয়েছেন আফগানদের এক উইকেট। ম্যাচ সেরার অন্যতম দাবিদার ছিলেন নাসিম। কিন্তু ব্যাট হাতে ৩৬ রান ও বল হাতে এক উইকেট নিয়ে শাদাব জিতেছেন সেরার স্বীকৃতি।