সবার পরে এসে আগে বিদায় নিলেন প্রিন্স হ্যারি

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে প্রিন্স হ্যারির মানসিক দূরত্বের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হলো রানি এলিজাবেথের মৃত্যুতে। স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে মৃৃত্যুশয্যায় থাকা রানিকে দেখতে পরিবারের অন্য সদস্যরা যথাসম্ভব একসঙ্গে এলেও প্রিন্স হ্যারি এসেছেন একা। বৃহস্পতিবার রাতে সবার পরে বালমোরালে পৌঁছে আজ সকালে সবার আগে সেখান থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

কাল রাতে একা বালমোরাল ক্যাসেলে পৌঁছেন প্রিন্স হ্যারি

স্কটল্যান্ডের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে রানি এলিজাবেথের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসকরা তাকে নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালে রাজপরিবারের সদস্যরা রানিকে দেখতে বালমোরালের পথে রওনা হন। সবার আগে রানির বড় ছেলে ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার সেখানে পৌছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বালমোরালের হেলিপ্যাডে নামে রানির মেয়ে প্রিন্সেস অ্যানকে বহনকারী হেলিকপ্টার।

ব্রিটেনের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিয়মিত সম্প্রচারসূচি স্থগিত করে রানির শারীরিক অবস্থার আপডেট দেওয়া শুরু করলে সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সংবাদকর্মী ও কৌতুহলী পর্যবেক্ষকদের মনোনেযাগ নিবদ্ধ হয় বালমোরালে। রাজপরিবারের সদস্যরা কে কে সেখানে যাচ্ছেন তা জানতে ও জানাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররাও। এরপর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের টেলিভিশন উপস্থাপকরা যখন একে একে সবাই কালো ও ধুসর রংয়ের কোট পরছিলেন, তখনই বুঝা গিয়েছিল এ যাত্রায় হয়তো পেরে উঠবেন না ৯৬ বছর বয়সী রানি।

সন্ধ্যার পর অ্যাবারডিন এয়ারপোর্টে অবতরণ করে রাজপরিবারের সদস্যদের বহনকারী একটি বিশেষ বিমান। এর কিছুক্ষণ পর বালমোরালের গেট দিয়ে প্রবেশ করে ঘন সবুজ রংয়ের একটি গাড়ি। প্রিন্স উইলিয়াম ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। আরোহীদের মধ্যে উইলিয়ামের পাশে ছিলেন তার চাচা প্রিন্স অ্যান্ড্রু। পেছনের আসনে ছিলেন প্রিন্স এডওয়ার্ড ও তার স্ত্রী কাউন্টেস অব ওয়েসেক্স প্রিন্সেস সোফি।

এরইমধ্যে টেলিভিশনের স্প্লিট স্ক্রিনে একইসঙ্গে বালমোরাল ও বাকিংহাম প্রাসাদের গেট দেখানো শুরু হয়। লন্ডন ও অ্যাবারডিন দুই শহরেই তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি। বাকিংহামের রুটিন চেঞ্জ অব গার্ড বাতিল করা হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় ইংলিং প্রিমিয়ার লীগ। রাজপরিবারের ও রানির ভক্ত নাগরিকদের একাংশ ফুল নিয়ে বাকিংহামের গেটে জড়ো হতে থাকেন।

রানি এলিজাবেথের শেষ সময়কে ঘিরে পুরো দৃশ্যপটে উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল তার পৌত্র প্রিন্স হ্যারি। প্রথমে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মার্কিন নাগরিক মেগান মার্কলে বালমোরালের পথে রওনা হয়েছেন। এরপর জানানো হয়, মেগান নয়, হ্যারি একাই বালমোরাল যাচ্ছেন। অনেক পরে রাতের দিকে সবুজ রংয়ের একটি গাড়িতে চড়ে বালমোরালের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় হ্যারিকে ক্যামেরাবন্দি করেন আলোকচিত্রীরা।

জানা গেছে, রানির মৃত্যুর আগে তাকে দেখতে পাননি প্রিন্স হ্যারি। কাল রাতে যেমন পরে পৌঁছেছেন, তেমনি আজ রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে সবার আগে বালমোরাল ছেড়ে গেছেন প্রিন্স হ্যারি। অ্যাবারডিন থেকে একটি ফ্লাইটে আরোহন করেছেন তিনি।

আইটিভি নিউজের রয়্যাল এডিটর ক্রিস শিপ বলেছেন, প্রিন্স হ্যারির জন্য খুব দুঃখজনক বিষয়। যুক্তরাজ্যে থাকার পরও তিনি নিজের দাদীকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পেলেন না। তারা পরস্পরের খুব কাছের ছিলেন। রাজপরিবার ছাড়ার সিদ্ধান্তের পরও প্রিন্স হ্যারি রানির সঙ্গে প্রায়ই কথা বলতেন।