বাড়ল ওষুধের দাম, বিপাকে জনগণ

দেশে তেল, চাল, আটাসহ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি। এর ফলে দরিদ্র থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি, এমনকি বিত্তশালীরাও পড়েছেন বিপাকে। ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বাড়া নিয়ে ক্রেতাদের প্রশ্নে জর্জরিত বিক্রেতারা। এক লাফে এতটা দর বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন তারা।

ওষুধের বাড়তি দামে বিপাকে জনগণ

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন হাসান আরিফ। সম্প্রতি বিয়ে করে ঢাকার মগবাজারে ভাড়া বাসায় উঠেছেন। সঙ্গে থাকেন বৃদ্ধ বাবা-মা। দ্রব্যমূল্যেব ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর সঙ্গে অসুস্থ বাবা-মায়ের ওষুধের ব্যয় মেটাতে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। বাবা-মাসহ পরিবারের মাসিক ওষুধ খরচ অন্তত ১০ হাজার টাকা।

শুধু হাসান আরিফ নয়, দেশের অধিকাংশ মানুষ ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। এক ধাক্কায় ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাওয়াটা পরিবারের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকানে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ওষুধের দাম নিয়ে তর্কাতর্কি হতে দেখা যায়। 

ঢাকার শাহবাগে ওষুধ কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, ‘বাচ্চার জ্বর, তাই নাপা সিরাপ কিনতে এলাম। তবে ২০ টাকার নাপা সিরাপের দাম এখন ৩৫ টাকা। সবকিছুর দাম এভাবে বাড়লে কীভাবে সংসার খরচ বহন করবো?’ বিক্রেতারা জানান, প্যারাসিটামলের ৬০ মিলিলিটার সিরাপে দাম বাড়ানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১৯টি জেনেরিকের ৫৩টি পদের ওষুধের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। অনেকগুলোর দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। প্যারাসিটামল সিরাপের পাশাপাশি এ জেনেরিকের ট্যাবলেটের দামও এমন হারে বাড়ানো হয়েছে। মেট্রোনাইডেজলকে বলা হয় ডায়রিয়ার কার্যকর ওষুধ। এটির পাতাপ্রতি ট্যাবলেটের খুচরা মূল্যও বেড়েছে ৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। এমোক্সিসিলিন বিপি এর একেক ধরনের দর বেড়েছে একেক রকম। এরমধ্যে এমোক্সিসিলিন বিপি ৫০০ এমজি ইনজেকশন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, যার আগের দাম ২৭ টাকা।

দাম বাড়ানোর বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, মূল্য পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুধু কাঁচামাল ও মোড়কসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াকে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে উৎপাদন ব্যয়, অন্যান্য খাতের ব্যয়, বিতরণ ব্যয়, প্রস্তুতকারক ও খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

কোভিড মহামারীর সময় কাঁচামালের দাম বাড়লেও দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে এসব ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় মূল্য না বাড়িয়ে উপায় ছিল না। কোম্পানিগুলো লোকসানের মুখে পড়ত।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদীর জানান, ডলারের দর ৮৫ থেকে বেড়ে ১০৫ টাকা হওয়ায় আমদানি ব্যয় ২৯ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে ডিজেলে কারখানা চালাতে গিয়ে জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। কাঁচামালের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে এসব কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অনেক।

ওষুধের এতটা দর বাড়ানো নিয়ে ক্রেতাদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও প্রশ্ন তুলেছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনিস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, এটা অন্য কোনোভাবে ম্যানেজ করা যেত কি না সেটি ভাবার উচিত ছিল। চাল, ডালের দাম বাড়ল, ঘর ভাড়া বাড়ল। এর সঙ্গে যদি ওষুধের দামও বেড়ে যায় তাহলে বাড়তি টাকা মানুষ কোথায় পাবে?’

এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ওষুধ ‘প্রমোশনের’ খরচ কমানো যেত বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, তাদেরকে তো বলা যেত প্রোডাকশন কস্ট কমিয়ে দাও। প্রমোশন যদি কেউ না করে, ডাক্তাররা কি ওষুধ লিখবে না?

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, সরকার নিজে ওষুধ কিনে তা জনগণের মধ্যে বিতরণ করলে সেটি দাম নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে। সরকারের নিজের ড্রাগ সরবরাহ করতে হবে, দুনিয়ার সব দেশে তাই করে।