খালি হাতে বাড়িছাড়া সেই মিজান এখন মালয়েশিয়ার শিল্পপতি
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মালয়েশিয়ার অন্যতম সেরা কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান মিজান গ্র্যান্ড ইন্টার ট্রেডার্স এসডিএন বিএইচডি। মালয়েশিয়া সরকারের বড়-বড় প্রকল্প এখন এই কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের হাতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বাংলাদেশি মিজান। এক সময় যিনি প্রায় খালি হাতেই ঠাকুরগাঁও থেকে চলে এসেছিলেন ঢাকায়। তারপর চলে যান মালয়েশিয়ায়। খুব একটা পড়াশোনাও করা হয়নি।
জানা গেছে, মিজান ২৬ বছর আগে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কঠোর পরিশ্রম, সততার পশাপাশি আর লেগে থাকার জেদের কারণে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি এখন মালয়েশিয়ার প্রথম শ্রেণির শিল্পপতি। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ২০১৫ সালে রাজ্যের রাজা তাকে অত্যন্ত সম্মানসূচক ডিগ্রি দাতু উপাধি দেন। ফলে ঠাকুরগাঁওয়ের স্বল্প শিক্ষিত মিজানের পরিচয় এখন দাতু মিজান।
কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে মিজান তৈরি করেন মিজান গ্র্যান্ড ইন্টার ট্রেডার্স এসডিএন বিএইচডি। এই প্রতিষ্ঠানের হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল অট্টালিকা, বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। একের পর এক শত শত কোটি টাকার প্রজেক্ট বাস্তবায়নে তার সাথে চুক্তি করে সরকার।
সম্প্রতি কেলান্টন কোতাবারু প্রদেশের সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস (এপিএম) হেডকোয়ার্টার্স নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের কার্যালয়ের সিনিয়র মন্ত্রী দাতু আবদুল লতিফ বিন আহমদ। কাজটি হচ্ছে মিজান গ্র্যান্ডের অধীনে। উদ্বোধনের সময় মন্ত্রী বলেন, আমরা সময়ের সেরা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি মিজান গ্র্যান্ড ইন্টার ট্রেডার্সকে এই প্রকল্পের দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা এমন এক কোম্পানিকে কাজ দিয়েছি, যারা তিন বছর মেয়াদের কাজটি মাত্র দুই বছরেই শেষ করতে সক্ষম।
তার অধীনে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। শতাধিক মালয়েশিয়ান নাগরিকও তার কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। গাধার মতো খাটুনি, সততার সাথে শ্রমিকের বেতনভাতা পরিশোধ, ভিসা পারমিট করার দায়িত্ব নিজ হাতে হ্যান্ডলিং করা, কৌশলী মধুর ব্যবহার করে কাজ আদায় করে নেওয়া, শ্রমিকের বিপদ-আপদে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে পাশে থাকা ইত্যাদি শ্রমিকবান্ধব কর্মকাণ্ড সাফল্যের চূড়ায় উঠতে দাতু মিজানকে সাহায্য করেছে।
মিজান গ্র্যান্ড ইন্টারে কাজ করা পাবনার মো. হারুন মিয়া বলেন, ২৬ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে আছি। আজ আমি মালয়েশিয়ার নাগরিক। এখানে বিয়ে করে বাড়ি গাড়ি সংসার করছি, এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে দাতু মিজানের কারণে।
তিনি জানান, দাতু মিজান একজন শিল্পপতি হয়েও শ্রমিকদের সাথে বসে ভাত খাচ্ছেন। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে শ্রমিকের ঘামের গন্ধমাখা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে রাত কাটিয়ে দিচ্ছেন। তার এসব কাজের ফলে শ্রমিকদের সাথে তার কোনো দূরত্ব নেই। এ কারণে তিনি শ্রমিকদের কাছ থেকে সহজেই কাজ আদায় করে নিতে পারছেন।
পুরো বিষয়টি সম্পর্কে দাতু মিজান বলেন, বিষয়টি খুবই সহজ। আপনি যে কাজই করেন না কেন, যেখানেই করেন না কেন, কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে, কাজে ফাঁকি দেওয়া বা প্রতারণা করা চলবে না। অধীনস্তদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে, তাদের বেতন মেরে দিয়ে এবং তাদের মনে কষ্ট দিয়ে আপনি কখনোই সামনে অগ্রসর হতে পারবেন না। বরং নানা কৌশলে শ্রমিকদের খুশি রাখতে পারলেই কেউ আপনার কোম্পানির অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর