ইরানি ড্রোনে নাজেহাল ইউক্রেনীয় বাহিনী

ইরানি ড্রোনের সাহায্যে চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনীয় বাহিনীর গুরুতর ক্ষতি করেছে রাশিয়া। প্রথমবারের মতো রুশ বাহিনী ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো বিদেশি অস্ত্রের ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহার শুরু করল। ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা এ কথা জানিয়েছেন। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে ইউক্রেন

ইউক্রেনের ৯২তম মেকানাইজড ব্রিগেডের আর্টিলারি কমান্ডার কর্নেল রদিওন কুলাগিন বলেছেন, খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সৈন্য ও গোলাবারুদের অবস্থান যেখানে, গত কয়েকদিন ধরে সেখানকার আকাশে ইরানে তৈরি শাহেদ-১৩৬ ডেল্টা উইং ড্রোনের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। রুশ বাহিনীর রংয়ে রঞ্জিত এসব ড্রোনকে জেরানিয়াম-২ নাম দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইরানের এসব অ্যাটাক ড্রোন সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় উড়ে এবং প্রবল বেগে আঘাত হানে। কেবলমাত্র ৯২ ব্রিগেডের অপারেশনাল এরিয়াতেই দুইটি ১৫২ মিমি সেলফ-প্রপেলড হাউয়িটজার কামান, দুইটি ১২২ মিমি হাউয়িটজার কামান ও দুইটি বিটিআর সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে এসব ড্রোন।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শুধু খারকিভ অঞ্চলে ইরানি ড্রোনের বহুল ব্যবহার চোখে পড়ছে। অন্যান্য এলাকায় রুশ বাহিনীর বিপুল সংখ্যক কামান, রকেট সিস্টেম ও গোলাবারুদ থাকায় তারা সেগুলো দিয়েই কাজ সারছে। কিন্তু খারকিভে অস্ত্র ও জনবলের দিক থেকে পিছিয়ে পড়ায় তারা ইরানি ড্রোনকে কাজে লাগাচ্ছে।

যুদ্ধ ও কৌশলগত পরামর্শক সংস্থা রেড সিক্স সলিউশনসের সিইও স্টক ক্রিনো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে হাইমারস রকেট সিস্টেম দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সমীহ জাগানিয়া নিবারক হয়ে উঠতে পারে শাহেদ-১৩৬ ড্রোন। ইরানি এ ড্রোনের উপস্থিতি ইউক্রেনীয় বাহিনীকে আভিযানিক পরিকল্পনা পাল্টাতে বাধ্য করছে। ইউক্রেন রণাঙ্গনের বিশাল ব্যাপ্তির কারণে শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের হামলা থেকে অস্ত্র ও লোকবল বাঁচানো কঠিন।

তিনি বলেন, শাহেদ-১৩৬ ড্রোনে অ্যান্টি জ্যামিং সিস্টেম থাকায় একে ঠেকানো অসম্ভব। জোড়ায় জোড়ায় উড়ে আসা ড্রোনের একটি শত্রুপক্ষের র‌্যাডার সিস্টেম বিকল করে, পরমূহূর্তে সঙ্গী ড্রোনটি সংশ্লিষ্ট টার্গেটে আঘাত হানে। এসব ড্রোন একবার কোনো টার্গেট লক করলে, সেটিকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

১৯৭৯ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে আসার পর থেকে ইরানের পক্ষে নতুন জঙ্গিবিমান ও বোমারু বিমান কেনা সম্ভব হয়নি। এজন্য ইরান-ইরাক যুদ্ধের শুরু থেকে দেশটি নিজেদের বিমান বাহিনীর শক্তিস্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে ড্রোন উদ্ভাবনে মনোযোগ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বিশ্বে ড্রোন প্রযুক্তিতে শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইরান।

ইরানের উদ্ভাবিত শাহেদ ড্রোন সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ শাহেদ-১৩৬। সাড়ে ১১ ফুট দীর্ঘ একেকটি শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের ওজন কমবেশি ২০০ কেজি, ডানার ব্যাপ্তি ৮ ফুট। ৩ ওয়াটের মোটরের সাহায্যে উড়তে সক্ষম শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের গতি ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটারের বেশি। এসব ড্রোনের রেঞ্জ ১৮০০-২৫০০ কিলোমিটার।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলেছে, এখনও পর্যন্ত রুশ বাহিনী রণাঙ্গনের কাছে কৌশলগত হামলার প্রয়োজনে ইরানি ড্রোন ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের গভীরে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণে তারা ড্রোন ব্যবহার করছে না।

ইউক্রেনের সেনা কর্মকর্তারা বলেন, ইরানের ড্রোন আকারে ছোট হওয়ায় এবং তুলনামূলক কম উচ্চতায় উড়তে পারায় বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইল সিস্টেম এসব ড্রোন শনাক্ত করতে পারে না। আমরা আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো আমাদেরকে এসব ড্রোনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রযুক্তি দেবে অথবা ইরান থেকে রাশিয়ায় ড্রোনের চালান ঠেকাতে ব্যবস্থা নেবে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ইরান থেকে রাশিয়ায় ড্রোনের চালান পরিবহন সমন্বয় করার অভিযোগে তেহরানভিত্তিক কোম্পানি সাফিরান এয়ারপোর্ট সার্ভিসেসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। একইসঙ্গে পারওয়ার পারস, দামা ও বাহারিস্তান কিশ নামের তিনটি ড্রোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।