ইউরোপে গ্যাস সংকট আগামী বছর বিশ্বে খাদ্য সংকট ডেকে আনবে
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জ্বালানি সংকটের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটা অন্য সব সংকট ডেকে নিয়ে আসে। প্রতিটি শিল্প কোনো না কোনোভাবে জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। জ্বালানিতে টান পড়লে তাই অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি অনিবার্য হয়ে ওঠে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশিরভাগ দেশের সরকার নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে ইউরোপে চলমান গ্যাস সংকটের কারণে আগামী বছর বিশ্বে যে খাদ্য সংকট আসতে চলেছে, সে বিষয়ে তেমন কিছুই করার থাকছে না। খবর নিউজউইক, আইসিআইএস।
ইউরোপে চলতি বছরের গ্যাস সংকট আগামী বছর বৈশ্বিক খাদ্য সংকটে রূপান্তরিত হবে
গ্যাস সংকটের কারণে সার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আগামী বছর খাদ্য উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনপিকে সার অর্থাৎ নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম অক্সাইড উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। অ্যামোনিয়া ফসফেটকে সারে রূপান্তর করতে উদারভাবে গ্যাস খরচ করা জরুরি।
সার উৎপাদন ব্যয়ের ৭০ শতাংশই প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। এ কারণে গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী হতে থাকায় সারের দামও সমানতালে উঠছে। এরপরও ইউরোপে সার উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো প্রতি টন অ্যামোনিয়ায় প্রায় ২ হাজার ডলার লোকসান দিচ্ছে বলে সিআরইউ গ্রুপের হিসাবে উঠে এসেছে। তবে লোকসান ও উচ্চমূল্যের চেয়ে বড় সত্য হয়ে উঠেছে গ্যাসের সংকট, যে কারণে ইউরোপের সার কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৭০ শতাংশই অলস হয়ে পড়েছে।
নেদারল্যান্ডসে য়ারা স্লুইসকিল, যুক্তরাজ্যে সিএফ ফার্টিলাইজারস, বেলজিয়ামে য়ারা তেরত্রি ও বিএএসএফ আঁতওয়াপ, ফ্রান্সে য়ারা গঁফেভিল, জার্মানিতে এসকেডব্লিউ, য়ারা ব্রুনসবুয়েট্টেল ও বিএএসএফ লুডভিগশাফেন, স্পেনে ফারতিবেরিয়া, নরওয়েতে য়ারা পর্সগ্রুন, ইতালিতে য়ারা ফেরারা, লিথুয়ানিয়াতে আচেমা ও লিফোক্স্রা, পোল্যান্ডে গ্রুপা আজোটি ও আনভিল, রোমানিয়ায় আজোমুরেস, স্লোভাকিয়ায় ডাসলো, হাঙ্গেরিতে নাইট্রোজেনমুভেক, বুলগেরিয়ায় অ্যাগ্রো পলিকেম ও নিউকেম এবং ক্রোয়েশিয়ায় পেট্রোকেমিজা-এই সবকটি কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন অর্ধেকের বেশি কমেছে।
সার উৎপাদনে এমন ধস খুব খারাপ খবর। বিশ্বে মোট খাদ্য উৎপাদনের ৪০-৬০ শতাংশই বাণিজ্যিক সারের ওপর নির্ভরশীল। কয়েক দশক ধরে রাসায়নিক সারের অব্যাহত ব্যবহারে উর্বরতা হারিয়েছে কৃষিজমি। প্রতি বছর সারের ব্যবহার পূর্ববর্তী মৌসুমের তুলনায় না বাড়ালে এসব জমিতে ফলন কমতে থাকে, সে ফসলের পুষ্টিমানও কমে যায়।
রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্ববাজারে এত বিপুল পরিমাণ শস্যের জোগান দেয় যে দেশ দুটিকে পৃথিবীর খাদ্যের ঝুড়ি বলা হয়। যুদ্ধের কারণে সে ঝুড়ি থেকে সরবরাহ কমেছে। ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির বিষয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যে সমঝোতা হয়েছে, তাও হুমকিতে রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘রপ্তানিকৃত শস্যের গন্তব্য পুনর্বিবেচনা’র কথা বলায়।
জুলাই মাসে গ্যাসের দাম যখন আরও কম ছিল তখন ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন বলেছিল, সার ব্যবহার কমলে শস্য, গম, চাল ও সয়াবিনের মোট বৈশ্বিক উৎপাদন ২ শতাংশ হ্রাস পাবে। এমন ২ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস বাজারে উল্লেখ্যযোগ্য হারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন যখন এ সতর্কবার্তা দেয়, তখনই ইউরোপে সার উৎপাদন সক্ষমতার ৭০ শতাংশ অলস পড়ে ছিল। এরপর গ্যাসের দাম আরও বেড়েছে, রাশিয়া থেকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। কাজেই অবস্থা এখন কত খারাপ তা সহজেই অনুমেয়।
গ্যাস সংকট হিসেবে যার শুরু, তা এরইমধ্যে সার সংকটে রূপ নিয়েছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে খাদ্য সংকটে রূপান্তর হবে। আফ্রিকা, মেক্সিকো ও দক্ষিণ এশিয়ার পুরোপুরি ইনপুট-নির্ভর কৃষি খাতে সার সেচ না হলে ফলন মেলে না। সার উৎপাদন কমলে সবচেয়ে চড়া মাশুল গুনতে হবে এসব দেশকে। একইভাবে, ফলন কমলেও সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হবে গরিব দেশগুলোকে। সীমিত সম্পদ ও বরাদ্দ থেকে আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারে ছুটোছুটি করতে হবে এসব দেশকে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.