চীনের ‘একমূখী বাণিজ্য নীতি’ পর্যালোচনা করবে কেনিয়ার নেতারা

বেইজিংয়ের সঙ্গে কেনিয়ার একমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে কেনিয়ার নীতিনির্ধারকদের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। দেশটির নেতারা এখন চীনের এই নীতি পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর বেশ জোর দিচ্ছেন। কেনিয়ার প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের জন্য চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু কিছু মানগত সমস্যার কারণে তা দেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা এবং জনসেবাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর এই বিষয়টির সূত্র ধরেই কেনিয়ার নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এমনটিই জানিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট।

চীনের ‘একমূখী বাণিজ্য নীতি’ পর্যালোচনা করবে কেনিয়ার নেতারা

সম্প্রতি, কেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনী চীনা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ড্রোনগুলোতে থাকা যথেষ্ট ত্রুটির কথা জানিয়েছে, যার ফলে ড্রোনগুলো প্রায়শই বিধ্বস্ত হয়। এই বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধান ছাড়াও, কেনিয়ানরা চীনের ও সরবরাহকারী কোম্পানি মেসার্স সিইটিসিআই-এর কাছে জবাবদিহিতা দাবি করছে বলে জানা গেছে।

কেনিয়ার অন্যান্য বিভাগগুলোও একইরকম সমস্যায় জর্জরিত। নাইরোবি মেট্রোপলিটান সার্ভিসেস (এনএমএস) জনসাধারণের কাজ করার জন্য চীনা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে অবহেলার শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফিনান্সিয়াল পোস্ট। অন্যদিকে এনএমএস নাইরোবির বিভিন্ন এলাকায় জল, নর্দমা সম্প্রসারণ এবং রাস্তার লাইটিং এর জন্য চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশনের সঙ্গে (সিআরবিসি) একটি চুক্তি করেছে।

এদিকে নিরাপত্তা এবং পরিবেশের সুরক্ষা সম্পর্কিত চুক্তির শর্তাবলী লঙ্ঘনের জন্য চীনা কোম্পানিকে তিরস্কার করে এনএমএস, সিবিআরসিকে কেনিয়ার নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদপ্তরে রিপোর্ট করতে বলেছে। সেইসঙ্গে সিবিআরসির প্রকল্প সাইটে শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুটি দুর্ঘটনার বিষয়েও ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এমন বিতর্ক সিবিআরসি-র জন্য নতুন নয়। এটি কেনিয়ানদের বিরুদ্ধে তার দুর্নীতিমূলক অনুশীলন এবং বৈষম্যের জন্য সম্প্রতি সামাজিক মিডিয়াতে প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল।

কেনিয়ায় ওয়েস্টার্ন রিং রোড প্রজেক্ট নির্মাণের জন্য ওই কোম্পানিটিকে চুক্তি দেওয়া হয়। এই চায়না ফান্ডেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শুধুমাত্র এর উচ্চ ব্যয়ের জন্যই নয়, কেনিয়ানদের কাছ থেকে নির্বিচারে উচ্চ টোল চার্জ নেওয়ার পরিকল্পনার জন্যও সমালোচিত হচ্ছে। এর আগে, ফিলিপাইনে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ২০০৯ সালে সংস্থাটিকে বিশ্বব্যাংক নিষিদ্ধ করেছিল।

দুর্ভাগ্যবশত, চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমস্যাগুলো গুণমান এবং পরিষেবার সমস্যাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কেনিয়ার জনসাধারণ দেশে কর্মরত চীনা কোম্পানিগুলির কাজের নীতি, এবং নৈতিক ও পরিবেশগত অনুশীলন সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করছে।

কেনিয়ার পরিবেশবাদীদের মতে, সিবিআরসির এই এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপকভাবে গাছ কাটা হতে পারে, যা স্থানীয় জলবায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

অন্যান্য প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য স্বল্প বা মাঝারি মেয়াদে সমাধান হতে পারে না। কেনিয়া বর্তমানে বেইজিংয়ের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে সম্পৃক্ত, তাই এই সমস্যাটি বেশ স্পষ্ট।

যদিও ফিনান্সিয়াল পোস্ট বলছে, গুণগতমানের ওপর জোর দেওয়া এবং স্থানীয় নিয়মের প্রতি সম্মান দেখানোটাই আপাতত চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য ভাল শুরু হতে পারে।