র‌্যাব: বাড়িছাড়া তরুণরা নতুন জঙ্গি দলের সদস্য

কুমিল্লা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া চার ছাত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, এমনটাই জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সংস্থাটির তরফ থেকে বলা হয়েছে, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির নাম ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’।

র‌্যাব বলেছে, তারা ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’ নামে গঠিত নতুন সংগঠনের সদস্য

বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কুমিল্লা থেকে বাড়ি ছাড়া চার ছাত্র- ইমতিয়াজ উদ্দিন রিফাত (১৯), মো. হাসিবুল ইসলাম (২০), রোমান সিকদার (২৪) এবং মো. সাবিত (১৯)। এছাড়াও রয়েছেন পটুয়াখালীর হোসাইন আহম্মদ (৩৩), মো. নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪) এবং বণি আমিন (২৭)।

খন্দকার আল মঈন জানান, কুমিল্লা থেকে ৮ তরুণ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর শুরু হয় গোয়েন্দা নজরদারি। বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে চার তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বাড়ি ছেড়েছেন।।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের একজন শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২)। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ আগস্ট সকালে নিলয়সহ ৫ জন বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লায় যায়। সোহেলের নির্দেশে তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। নিলয়, সামি, নিহাল কুমিল্লার লাকসামের উদ্দেশ্যে রওনা করলেও ভুল করে তারা চাঁদপুরে চলে যায়। চাঁদপুর থেকে তারা আবার লাকসামের পথে রওনা করে। লাকসাম পৌঁছালে সোহেল তাদের রিসিভ করে। তাদেরকে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে তারা দেখতে পায় আগে থেকেই দলের অবশিষ্ট তিনজন সেখানে অবস্থান করছে। পরে নিলয়, সামি, নিহাল ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় সোহেল। নিয়ামত উল্লাহ তত্ববধানে সেখানে একদিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। সেখানে সামি, নিহাল ও শিথিলকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালী পাঠায়। পটুয়াখালীতে পৌঁছালে বনি আমিন নিলয়কে রিসিভ করে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যায়। সেখানে হুসাইন ও নেছারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। বণি আমিন নিলয়কে তিনদিন তার বাসায় রাখে। পরে নিলয়কে আবার সেই মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে হুসাইন ও নেছাররা ছিল। পরে হঠাৎ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে ঢাকায় বাড়ি চলে আসে নিলয়।

এরপর নিলয়ের দেওয়া তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে বণি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বণি আমিনের দেওয়া তথ্যমতে ঢাকা-ময়মনসিংহ এলাকা থেকে নেছার উদ্দিন ওরফে উমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান সিকদার ও সাবিতকে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কুমিল্লার কোবা সমজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে একবছর আগে সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পায় হাসিব ও রিফাত। পরে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হাঞ্জালার কাছে নিয়ে যায়। ফাহিম তাদের কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ভিডিও দেখাতেন। এভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে সশস্ত্র হামলার জন্য তাদের প্রস্তুত করা হতো।