পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার, হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ

দুর্গাপূজা আর ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে পাঁচ দিনের বন্ধে হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত। তবে সব জায়গাতেই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করলেও জেলা প্রশাসন বলছে, বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার, হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া

ঢাকা থেকে পাহাড় ও সাগর দেখতে বেরিয়েছেন পর্যটক রিফাত হাসান। তিনি বান্দরবান ঘুরে এসেছেন কক্সবাজারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কথা হয় কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে। তিনি বলেন, চারদিন আগে বান্দরবান থাকতে কক্সবাজারের ২৫টি হোটেলে অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য চেষ্টা করেছেন। তবে কোনো হোটেল পাননি। শেষপর্যন্ত কক্সবাজার হিলটনে রুম পেয়েছেন, তবে এক রুম এক রাতের জন্য চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে এই হোটেলে অনেকবার রাত্রিযাপন করেছেন মাত্র দুই হাজার টাকা ভাড়ায়। টানা ছুটিতে মানুষ বেশি এসেছে, তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে হোটেল হিলটনের ব্যবস্থাপক ঊর্মি বড়ুয়া বলেন, তাদের কক্ষ ভাড়া সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। এর বেশি নেওয়া হয় না। বেশি নেওয়ার বিষয়টি অপপ্রচার।

তবে কক্সজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তাদের কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে সমিতি ও প্রশাসন যৌথভাবে ব্যবস্থা নেবে।

দুর্গাপূজার দশমী উপলক্ষে গত বুধবার ছিল সরকারি ছুটি, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি অফিসে, রোববার রয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) সরকারি ছুটি। যারা বৃহস্পতিবারও অফিস থেকে ছুটি নিতে পেরেছেন তারা পাঁচ দিনের ছুটি পেয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের তথ্যমতে, কক্সবাজারে ৫২৬টি হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন রাত্রিযাপন করতে পারে প্রায় সোয়া লাখ পর্যটক।

শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতজুড়ে দেখা যায় মানুষের ভীড়। তীব্র গরম উপেক্ষা করে পর্যটকরা শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছেন নোনাজলের ঢেউয়ে। সাগর কিছুটা শীতল আর ঢেউয়ের তীব্রতাও কম। তাই ঢেউয়ে মেতেছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা মাহমুদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে প্রচণ্ড গরম। তারপরও টানা ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। খুব ভালো লাগছে।

লাবণী পয়েন্টে পর্যটক তৌহিদ হোসেন বলেন, টানা ছুটি কিংবা কোনো উৎসব হলেও কক্সবাজারের হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসগুলো কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্যের দোকান ও যানবাহনের চালকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে উঠেন। হোটেল অভিসার’ নামের একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের ভাড়া সাড়ে আট হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তৌহিদুল ইসলাম।

যদিও হোটেল অভিসারের প্রধান নির্বাহী জসিম উদ্দিন বলেন, তাদের একটি কক্ষের ভাড়া ছয় হাজার টাকা। এর কম-বেশি হবে না।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত কোনো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। তবে ছাড় কম দেওয়া হচ্ছে এই ধরনের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যদি সুনির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।