দিল্লিতে প্রতিবাদ সভায় মুসলমানবিরোধী হেইট স্পিচ

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় মুসলমানবিরোধী বিষোদগার করেছেন উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর নেতারা। ক্ষমতাসীন বিজেপি-দলীয় এমপি পরভেশ ভার্মা একটি সম্প্রদায়কে অর্থনৈতিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সভায় ‘এসব মানুষের’ হাত ও মাথা কেটে ফেলার আহ্বান জানান জগতগুরু যোগেশ্বর আচার্য নামের এক ধর্মীয় নেতা। নামোল্লেখ না করলেও মুসলমান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করেই এসব ঘৃণা উদগীরক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকরা। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

পশ্চিম দিল্লী থেকে নির্বাচিত বিজেপি-দলীয় লোকসভা সদস্য পরভেশ ভার্মা                        ফাইল ছবি

এক সপ্তাহ আগে মনীশ নামে এক হিন্দু যুবক হত্যার প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে সভা করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও সমমনা উগ্রবাদী সংগঠনগুলো। হত্যার ঘটনায় ছয় মুসলিম যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পূর্ব শত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো মনীশ হত্যাকে ঘিরে মুসলমান-বিদ্বেষ ছড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে।

ইন্ডিয়া টুডের সাংবাদিক শ্রেয়া চ্যাটার্জি তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক সমাবেশ হেইট স্পিচের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। বক্তাদের একজন জগতগুরু যোগেশ্বর আচার্য হিন্দুদের যারা আক্রমণ করে তাদের হাত ও মাথা কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন।

যোগেশ্বর আচার্য বলেন, দরকার হলে তাদের হাত কেটে ফেলুন, মাথা কেটে ফেলুন। বড়জোর আপনাকে জেলে যেতে হবে। কিন্তু এদের শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে। এদেরকে খুঁজে খুঁজে মারুন।

সমাবেশে আরেক বক্তা মহান্ত নওয়াল কিশোর দাস সমবেতদের বলেন, বন্দুক সংগ্রহ করুন। বন্দুকের লাইসেন্স নেন। লাইসেন্স না পেলে এমনি কিনুন। চিন্তার কিছু নাই। যারা আপনাদের হত্যা করতে আসে, তারা কি লাইসেন্স নিয়ে আসে? তাহলে আপনার লাইসেন্স লাগবে কেন? আমরা সবাই যদি একসঙ্গে যাই, তাহলে দিল্লী পুলিশ কমিশনারও আমাদেরকে চা খাওয়াতে চাইবে, যা চাই তা করতে দেবে।

এসব হেইট স্পিচের পক্ষ সমর্থন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র বিনোদ বনসাল বলেছেন, এটা ছিল জন আক্রোশ র‌্যালী। কোনো বিশেষ সম্প্রদায় নয়, জিহাদীদের লক্ষ্য করে এসব কথা বলা হয়েছে। মানুষ ক্ষেপে আছে। যা বলা হয়েছে তার অর্থ হলো আক্রান্ত হলে প্রয়োজন বোধে জিহাদীদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার্থে তারাও সংঘবদ্ধ হতে পারে।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির দিলশাদ গার্ডেনে এ সমাবেশে পশ্চিম দিল্লি থেকে নির্বাচিত বিজেপি এমপি পরভেশ ভার্মা বলেন, এসব মানুষকে সম্পূর্ণ বয়কট করুন। এদেরকে যেখানেই দেখুন, আমি বলছি, যদি এদের ঠিক করতে চান তাহলে একটাই উপায় আছে- সম্পূর্ণ বহিষ্কার। আমার কথায় একমত হলে সবাই হাত উঁচিয়ে বলুন যে আমরা এদেরকে সম্পূর্ণ বহিষ্কার করব, আমরা এদের দোকান থেকে কিছু কিনব না, আমরা এদের শ্রমিক হিসেবে কখনো কাজে নেব না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভার্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আমি কোনো সম্প্রদায়ের নাম নিইনি। আমি বলেছি হত্যার সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোকে বয়কট করতে। কেউ যাতে তাদের রেস্তোরাঁয় খেতে না যায়, তাদের দোকানে কেনাকাটা না করে।

পরভেশ ভার্মা অস্বীকার করলেও তার ও অন্যান্য বক্তাদের কথাগুলো মুসলমান সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করেই বলে মনে করছেন ভারতের সচেতন নাগরিকরা। দ্য ওয়্যারের সাংবাদিক রোহিনী সিং বলেছেন, একদিকে মুসলমানদের খুঁজে খুঁজে মারার কথা বলা হবে, আরেকদিকে কেউ জনসভায় বক্তৃতার সময় আজান শুনে বক্তব্য থামাবেন, এভাবে হয় না।

উপসালা ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অশোক সোয়াইন টুইটারে এক পোস্টে পরভেশ ভার্মার বক্তৃতার ফুটেজ সংযুক্ত করে লেখেছেন, হিন্দু গরিষ্ঠতাবাদী বিজেপির এক এমপি তার শত শত সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছেন যাতে তারা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করে।