হিউম্যান রাইটস: নির্বাচনের আগে বেড়েছে বিরোধীদের দমনপীড়ন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের ওপর সরকারি দমনপীড়ন বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)

সোমবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ: রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় এইচআরডব্লিউ।

প্রতি্বেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখানো এবং বিরোধী সমর্থকদের সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বাড়িতে অভিযান, গণগ্রেপ্তার, সহিংসতা এবং ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখানো এবং বিরোধী সমর্থকদের সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা।

বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ওইসব ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করতে এবং বিরোধীদের সভা ও সমর্থকদের ওপর হামলাকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এইচআরডব্লিউ এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলে আসছেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর সক্ষম। কিন্তু আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, বিরোধীদের ওপর হামলাসহ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলে আসছেন, বাংলাদেশ একটি পরিণত গণতান্ত্রিক দেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে সক্ষম। কিন্তু আগের নির্বাচনগুলোয় বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতা ও হামলা এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব রাজনৈতিক হামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এক অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

এইচআরডব্লিউ বলেছে, তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন কয়েকশ। এ ছাড়া সম্প্রতি অন্যান্য সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের হত্যার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। সহিংসতার জন্য উভয় পক্ষ একে অপরকে দায়ী করেছে। যদিও পুলিশ শুধু বিরোধীদের গণহারে গ্রেপ্তার করেছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়াল। তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘আমার ওপর যারা হামলা চালিয়েছে আমি তাদের চিহ্নিত করতে পারব। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার বিভিন্ন কমিটির সদস্য। হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও আমাকে কোনো সাহায্য করেনি।’

সংস্থাটি জানিয়েছে, বিএনপির হিসাব মতে, তাদের নেতাকর্মীদের নামে অন্তত ২০ হাজার মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলায় আসামিরা অজ্ঞাতনামা। বিরোধীদের দমনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে নাম উল্লেখ না করে বহু মানুষের বিরুদ্ধে এমন মামলা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মামলায় যে কোনো ব্যক্তিকে ভয় দেখানো বা গ্রেপ্তার করার হুমকি দিতে পারছে পুলিশ। এমনকি সরকারবিরোধী যারা দেশের বাইরে আছেন, দেশে থাকা তাদের পরিবারকেও নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।