টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ইতিহাসের পাতা থেকে খুঁটিনাটি

অস্ট্রেলিয়াতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম সংস্করণ। প্রথম দিনেই অঘটন ঘটিয়েছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নামিবিয়া। এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন দল শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। পরদিন স্কটল্যান্ডের শিকারে পরিণত হলো দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্কটিশদের জয়টা ৪২ রানের বড় ব্যবধানে।

কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসছে তাসমান সাগর তীরে; অস্ট্রেলিয়াতে। বিশ্বকাপে থাকছে মোট ১৬টি দল। অস্ট্রেলিয়ার সাতটি শহরের সাতটি ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সবকটি ম্যাচ। এগুলো হলো জিলং,হোবার্ট, অ্যাডিলেড ওভাল, ব্রিসবেন, মেলবোর্ন, পার্থ এবং সিডনি। ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে টুর্নামেন্ট। ফাইনাল ১৩ নভেম্বর।

ক্রিকেট বিশ্বের তথাকথিত ‘বড়’ দাদারা ২২ গজে প্রথমবার নামছে ২২ অক্টোবর। বিশ্বকাপের ‘আসল’ শুরুর দিনে মুখোমুখি হবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। পরদিন মাঠে গড়াবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মহারণ ভারত-পাকিস্তান। এমন আবহে আমরা ফিরে তাকাব কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের ইতিহাসের দিকে। খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করব টুকরো টুকরো ইতিহাসকে।

আইসিসি আয়োজিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাস দীর্ঘদিনের নয়। ২০০৭ সালে প্রথমবার শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। আসর বসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাতে। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, প্রতি দুই বছর অন্তর প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে। কোনো কারণে আইসিসির ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ একই বছরে হলে প্রতিযোগিতাটি আগের বছর আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে।

২০০৭ সালে প্রথমবারেই খেতাব জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত। ফাইনালের রুদ্ধশ্বাস লড়াইতে তারা হারায় চিরশত্রু পাকিস্তানকে। টুর্নামেন্টের ভারত বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। এই ম্যাচেই স্টুয়ার্ট ব্রডকে এক ওভারে ছয় বলে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। ভারত-পাকিস্তানের গ্রুপ ম্যাচ সাক্ষী ছিল অভিনব 'বোল আউটের'।

২০০৭ সালে ফাইনালে হারের জ্বালা পাকিস্তান মিটিয়ে ফেলে পরের বিশ্বকাপেই। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান শিরোপা জেতে। ২১ জুন, ২০০৯ তারিখে শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে উড়িয়ে জয় পায় পাকিস্তান। ব্যাটে, বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে জয়ের নায়ক হয়ে যান শহিদ আফ্রিদি।

২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ থাকার কারণে এই প্রতিযোগিতার আসর বসে ২০১০ সালেই। ২০১০ সালের প্রতিযোগিতা ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হয়। মে, ২০১০ সালে আয়োজিত ঐই প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড দল শিরোপা জেতে। অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হারান পল কলিংউডরা।

২০১২ সালে প্রথমবারের মতো এই সংস্করণের বিশ্বকাপ বসে এশিয়া মহাদেশে। আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কা। এই আসরের ফাইনালে স্বাগতিকরা মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ক্যারিবীয়রা জেতে খেতাব। ফাইনালে স্যামুয়েল বদ্রির স্পিন ছোঁবলে ঘায়েল হয়েছিলেন লঙ্কান ব্যাটাররা। একমাত্র দল হিসেবে শুরুর চার আসরেই সেমিফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান।

২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট এককভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ। এই আসর দিয়ে বাড়ানো হয় দলের সংখ্যা। ১২ দল থেকে বিশ্বকাপ হয়ে যায় ১৬ দলের। যেখানে তিন দলের অভিষেক হয়। আর শ্রীলঙ্কা করে শাপমোচন। নিজেদের দেশের মাটিতে শিরোপা জিততে না পারার জ্বালা মিটিয়ে ফেলে এবার। ফাইনালে সহজেই ভারতকে হারায় লঙ্কানরা। ব্যাট হাতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেন কুমার সাঙ্গাকারা। ফলে এখন পর্যন্ত আয়োজিত পাঁচটি প্রতিযোগিতায় ভিন্ন ভিন্ন চারটি দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব গড়ে।

তবে আয়োজক বাংলাদেশ সেভাবে বলার মতো পারফরম্যান্স করতে পারেনি। উল্টো পৃথিবীর প্রথম স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে খেলতে হয় বাছাইপর্ব। এখানে আইসিসি'র দশটি পূর্ণাঙ্গ সদস্যসহ ২০১৩ সালের বাছাইপর্বের অংশগ্রহণকারী শীর্ষ ছয়টি দল অংশ নেয় সরাসরি মূলপর্বে। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট পূর্ণাঙ্গ সদস্যকে বাদ দিয়ে সুপার টেন পর্বের আয়োজন করা হয়েছিল।

বাকী আট দলকে নিয়ে গ্রুপ পর্বের আয়োজন করা হয়। শীর্ষ দুই দল সুপার টেন পর্বে খেলার সুযোগ পায়। নেপাল, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমির আমিরাত- এই তিনটি দলের এবারের প্রতিযোগিতায় অভিষেক ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির ও ভারতের বিরাট কোহলি যথাক্রমে সর্বোচ্চ উইকেট ও রান সংগ্রাহক হন।

২০১৬ সালের আসর বসেছিল ভারতে। আয়োজক ভারত এবারের প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। তাদেরকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দল হিসেবে তারাই জেতে একাধিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফাইনালে ক্যারিবীয়দের হয়ে মারলন স্যামুয়েলস দুরন্ত ইনিংস খেলেন। ম্যাচের শেষ ওভারে বেন স্টোকসকে পরপর চারটি ছয় হাঁকিয়ে ক্যারিবিয়ানদের শিরোপা জিতিয়ে নায়ক বনে যান কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।

২০২০ সালে ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে সেটা আয়োজন করা হয়। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্টের সেরা নির্বাচিত হন ডেভিড ওয়ার্নার। এই টুর্নামেন্টেই ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি যে কোনো ফরমেটের বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম জয় পায় পাকিস্তান। বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটিতে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল পাকবাহিনী।

* একনজরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কিছু নজির গড়া পরিসংখ্যান:

১) সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক: সাকিব আল হাসান (৪১)

২) সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: মাহেলা জয়াবর্ধনে (১০১৬)

৩) ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান: ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (১২৩); প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ; ২০১২

৪) সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট: ড্যারেন স্যামি (১৬৪.১২) ২০০৯-১৬

৫) সর্বাধিক সেঞ্চুরি: ক্রিস গেইল (২টি)

৬) সর্বাধিক ফিফটি: বিরাট কোহলি (১০টি)

৭) সর্বাধিক ছয়: ক্রিস গেইল (৬৩টি)

৮) এক টুর্নামেন্টে সর্বাধিক রান: বিরাট কোহলি (৩১৯)

৯ ) সর্বোচ্চ জুটি: মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা (১৬৬); প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১০) সেরা বোলিং ফিগার: অজান্তা মেন্ডিস (৮/৬); প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে; ২০১২

১১) এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট: ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (১৬টি); ২০২১