রাশিয়া বিশ্বকাপে আকাশি-সাদার কাঁপন থাকবেতো?

২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ের গোলে পরাজয়ের পর দুই যুগ পর বিশ্বকাপ পাবার স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। ভিন্নগ্রহের খেলোয়াড় লিওনেল মেসির বিষন্ন চেহারাটিই হয়তো সেই হারের প্রতীক হয়ে আছে। বিশ্বজুড়ে সেদিন আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কান্নার রোল পড়ে যায়। মেসি তখন তার সমর্থকদের বলেছিলেন, 'কাপটিকে ছুঁয়ে দেখতে আমি আবার আসবো।' তিনি হয়তো রাশিয়া বিশ্বকাপের কথাই বলেছিলেন। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা খেলতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় সংশয়।

রাশিয়া বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে ১০টি দলের মধ্য থেকে শীর্ষ চারটি দল সরাসরি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলবে। পঞ্চম দলটিকে সুযোগ পাবে ওশিয়ানিয়া অঞ্চলের সেরা দলের সঙ্গে প্লে-অফ খেলে। আর্জেন্টিনার বর্তমান অবস্থান ৬ষ্ঠ। আজ সকালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হারার পর আর্জেন্টিনা সাত নম্বরে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০ মিনিটে পিছিয়ে গিয়েও স্বাগতিক প্যারাগুয়েকে শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলে হারিয়েছে পেরু। এই ম্যাচটি কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের ফলে ১১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ব্রাজিল। যষ্ঠস্থানে থাকা আর্জেন্টিনা রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পাবে কি না সেটা নিয়ে এখনো সংশয় থেকে গেল। বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের সঙ্গে যেই ধরনের ফুটবল খেলেছে। তাতে প্রস্তুতি পর্বেই থেমে যেতে পারে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন।

আজ যদি প্যারাগুয়ে জিততো তাহলে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট টেবিলের সাতে চলে যেতো। ১১ ম্যাচে মাত্র ৪ জয় আর চার ড্রয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে আছে আর্জেন্টিনা। তবে তিন নম্বরে থাকা কলম্বিয়ার সঙ্গে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র দুই। চার এবং-পাঁচ নম্বরে থাকা ইকুয়েডর-চিলির সঙ্গে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র এক।

সামনের দলগুলোর সঙ্গে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট ব্যবধান ১/২। কিন্তু সাত আর আটে থাকা প্যারাগুয়ে-পেরুও কিন্তু আর্জেন্টিনার চেয়ে এরকম ১/২ পয়েন্টেই পিছিয়ে। এসব দলের যেকোন একটি জয় বা পরাজয় সবকিছু উল্টে দিতে পারে। আজকে চিলি-কলম্বিয়া ম্যাচটি ড্র হওয়ায় লাভবান হয়েছে আর্জেন্টিনা। যেকোন একটি দল জিতলেই মেসিদের সঙ্গে ওই দলের ব্যবধান আরো বেড়ে যেত।

সূচি অনুযায়ী, বাছাই পর্বে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে মোট ১৮টি ম্যাচ হয়ে থাকে। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের জন্য এটাই এখন সবচেয়ে সুখের কথা। মেসিদের সামনে এখনো রয়েছে সাতটি ম্যাচ। জয়ের জন্য ৩ পয়েন্ট ধরে এখনো ২১ পয়েন্ট পেতে পারে হিগুয়েইন-মেসিরা। কিন্তু সর্বশেষ চার ম্যাচ জয়শূন্য থাকা আর্জেন্টিনার কাছে সেটি প্রত্যাশা করাও বোকামি বৈকি।

ব্রাজিলের কাছে ০-৩ গোলের পর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি বলেছেন, 'এই পরাজয় আমরা প্রত্যাশা করিনি। প্রথম গোলটির আগ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। আমরা ভালো খেলছিলাম। এরপরই ছন্দপতন। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। জয়ের জন্য খেলতে হবে।' তিনি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেন। এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার চার জয়ের তিনটির নায়ক মেসি নিজেই।

সর্বশেষ ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেই ভয়ই হয়তো চেপে ধরেছে আর্জেন্টিনাকে। আজ থেকে ঠিক চার চার দিন পর কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচ জিতলে হয়তো সেরা চারে দেখা যাবে আর্জেন্টিনাকে। সেখানেও থাকছে অনেক হিসাব। চিলি-ইকুয়েডরকে ম্যাচে হারতে অথবা ড্র করতে হবে। আরো অনেক কিছু। কিন্তু আর্জেন্টিনাই যদি হেরে যায় তবে কি হবে এই হিসাব-নিকাশ করে? আপাততো জয় ছাড়া কোন পথ খোলা নেই আর্জেন্টিনার।

আপনি আরো পড়তে পারেন

আর্জেন্টিনাকে উড়িয়ে দিল নেইমারের ব্রাজিল

মেসির অনন্য ৫০০

নেইমারের বাবা: ব্যালন ডি’অর মেসির প্রাপ্য

তবুও শীর্ষেই অবস্থান আর্জেন্টিনার

ভুটানের কাছে হেরে ডুবতে বসলো বাংলাদেশের ফুটবল