কাতার বিশ্বকাপ: ইকুয়েডরের স্বপ্ন নকআউট পর্ব

ল্যাটিন আমেরিকার দলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক দুর্বল ইকুয়েডর। তাই বলে ফেলনার নয়। বিশ্বের যে কোনো দলের ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাদের। সমস্যা হচ্ছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাধা পাড়ি দেওয়াটাই। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ের মতো দলগুলোকে চাইলেই তো আর টেক্কা দেওয়া যায় না। ইকুয়েডরের জন্য বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গণ্ডি পেরোনোই বিরাট চ্যালেঞ্জ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হতে হচ্ছে তাদের। গতবারও রাশিয়ার বিশ্বমঞ্চের টিকিট পায়নি তারা। সেই দুঃস্মৃতির ক্ষতে এবার প্রলেপ দিয়েছে ইকুয়েডর।

কাতার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার পর ইকুয়েডরকে ঘিরে ধরেছে বিতর্ক

কাতারে দলটি খেলতে যাচ্ছে তাদের চতুর্থ বিশ্বকাপ। এর আগে ২০০২ সালে বড় মঞ্চে অভিষেক হয় ইকুয়েডরের। ৩২ দলের মধ্যে ২৪তম হওয়া দলটি চমকে দিয়েছে পরের আসরে। ওঠে নকআউট পর্বে। যা টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। সাফল্যের ধারা আর অব্যাহত রাখতে পারেনি ইকুয়েডর। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে তাদের থাকতে হয়েছে দর্শক সারিতে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ দিয়ে ফিরলেও পরে চার বছরের জন্য ফের নির্বাসনে চলে যায় তারা।

ইকুয়েডরের গ্রুপটা অতটা কঠিন নয়। শেষ ষোলোতে যাওয়ার সক্ষমতা আছে চারটি দলেরই। স্বাগতিক কাতার, ইকুয়েডর, সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডসকে নিয়ে গড়া হয়েছে ‘এ’ গ্রুপ। প্রথম তিনটি দলই অবশ্য প্রায় সমশক্তির। নক আউট পর্বে যাওয়ার দৌড়ে ফেভারিট ডাচরা। দ্বিতীয় টিকিটের জন্য ইকুয়েডর, সেনেগাল ও কাতারের লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইকুয়েডরের দুশ্চিন্তার কারণ ফিনিশিং। সবশেষ পাঁচ ম্যাচের দুটিতে গোল করতে পেরেছে তারা। তিন ম্যাচে করেছে গোলশূন্য ড্র।

তারকা: ইকুয়েডরে নেই কোনো বড় মাপের তারকা। তবে দলটিকে কিছুটা হলেও আশা দেখাচ্ছে দুই ভ্যালেন্সিয়া- ইনার ভ্যালেন্সিয়া ও অ্যান্থনি ভ্যালেন্সিয়া। বয়সের সীমায় দুজন অবশ্য দুই মেরুতে। অ্যান্থনি দলের সবচেয়ে দুই তরুণের একজন। ইনার অবশ্য অভিজ্ঞদের মধ্যে একজন। বড় কোনো স্বপ্ন নেই তাদের। ইকুয়েডরের চ্যালেঞ্জ নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার।

প্রধান কোচ: খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারটা বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেনিনি গুস্তাভো আলফারো। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ার। আর্জেন্টাইন এই কোচ খেলতে পারেননি জাতীয় দলেও। ১৯৯২ সালে বুট জোড়া তুলে রেখে কোচিংয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। তিন দশকের এই কোচিং অধ্যায়ে বেশ কয়েকটি ক্লাবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের প্রধান কোচ নিযুক্ত হন আর্জেন্টাইন সাবেক মিডফিল্ডার। তার দারুণ রণ কৌশলের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের বাধা পাড়ি দেয় ইকুয়েডর। এবার মূলপর্বে ইতিবাচক করার কিছু স্বপ্ন দেখছেন আলফারো।

কিংবদন্তি: ইকুয়েডরের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে ভাবা হয় ইভান হুরতাদোকে। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা তার দখলে। ১৯৯২ সালে ইকুয়েডরের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। ২০১৪ সালে জাতীয় দলকে বিদায় জানান এই ডিফেন্ডার। ২২ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবল অধ্যায়ে ইকুয়েডরের হয়ে ১৬৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এ সময়ে চারটি গোল করেন এই কিংবদন্তি।

বিতর্ক: অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দক্ষিণ আমেরিকার চতুর্থ দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট কেটেছে ইকুয়েডর। তবু সুতোয় ঝুলে গিয়েছিল দলটির বিশ্বকাপ ভাগ্য। ইকুয়েডর 'অযোগ্য' খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করে চিলি। ইকুয়েডরকে বিশ্বকাপে খেলতে না দেওয়ারই যেন পণ করেছে তারা! ফিফা চিলির আবেদন নাকচ করে দিলেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। আন্তর্জাতিক আদালদের দ্বারস্থ হয় চিলি। বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।

বিতর্কের কেন্দ্রে কলম্বিয়ান বংশোদ্ভূত ফুটবলার কাস্তিলো। তাকে নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক করিয়েছে ইকুয়েডর। বাছাইপর্বের বেশকিছু ম্যাচও খেলেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বয়স চুরি ও ভুয়া সনদের অভিযোগ ওঠে। ফিফার তদন্তে পার পেয়ে যাওয়া দলটার বিরুদ্ধে এবার নাকি শক্ত প্রমাণ মিলেছে। এতে করে এখনো বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে কিছুটা হলেও শঙ্কিত ইকুয়েডর।

ইকুয়েডর:

গ্রুপ ‘এ’: কাতার, ইকুয়েডর, সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডস।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৪৪

বিশ্বকাপ রেকর্ড:
১৯৩০ -৫৮: অংশ নেয়নি
১৯৬২-৯৮: বাছাই
২০০২: গ্রুপপর্ব
২০০৬: শেষ ১৬

২০১০: বাছাই
২০১৪: গ্রুপপর্ব
২০১৮: বাছাই

গ্রুপপর্বের ম্যাচ:

২০ নভেম্বর: কাতার-ইকুয়েডর, রাত ১০টা
২৫ নভম্বের: ইকুয়েডর-নেদারল্যান্ডস, রাত ১০টা
২৯ নভম্বের: ইকুয়েডর-সেনেগাল, রাত ৯টা