বাজির ঘোড়া ইংল্যান্ড

বরাবরের মতো এবারের বিশ্বকাপেও বাজির ঘোড়া হিসেবে পরিচিতি ইংল্যান্ডের। চার বছর আগে রাশিয়ার মহাযজ্ঞে তো একটা পর্যায়ে শিরোপা সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল থ্রি লায়নরা। শেষ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া রূপকথায় থেমে যায় ইংলিশদের স্বপ্ন যাত্রা। ম্যাচের শুরুতে লিড নিয়েও ফাইনালের টিকিট পায়নি ইংল্যান্ড।

কাতার বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে ইংল্যান্ড

ক্রোয়াটদের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় হ্যারি কেন অ্যান্ড কোংয়ের। এর প্রভাব পড়েছে চতুর্থস্থান নির্ধারণী ম্যাচেও। সেখানে তারা হারে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামের কাছে। এই ইংল্যান্ড এখন আরও পরিণত। দলটিতে আছেন হ্যারি কেনের মতো বিশ্বমানের স্ট্রাইকার। তাকে সঙ্গ দিতে প্রস্তুত অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার রহিম স্টার্লিং।

ফিল ফোডেন, বুকায়ো সাকার মতো তরুণরা এখন দায়িত্ব নিয়ে খেলতে জানেন। মাথার ওপর ছাতা হয়ে আছেন জর্ডান হ্যান্ডারসনের মতো পোড় খাওয়া ফুটবলার। জ্যাক গ্রেয়ালিশের উপস্থিতি দলে এনে দেয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস। সব মিলিয়ে দলটা বেশ ভারসাম্য। এই ইংল্যান্ড এবার ফেভারিটের তকমা লেপ্টে দেওয়া হচ্ছে। ইংলিশরা স্বপ্ন দেখছেন হারানো রাজত্ব ফিরে আনার।

১৯৬৬ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ট্রফি রেখে দিয়েছিল তারা। এরপর শিরোপা জেতা তো দূরে থাক, আর ফাইনালেই ওঠা হয়নি তাদের। সেই হতাশা কিছুটা হলেও দূর করার সুযোগ এসেছিল গত বছর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে। ঘরের মাঠ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শিরোপা উৎসবের সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও হতাশার সমুদ্রে ডুবে যায় তারা।

ইউরোর ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। কাতার বিশ্বকাপেও এর পুনরাবৃত্তি হোক সেটা চায় না ইংল্যান্ড। এবারের মহাযজ্ঞে তুলনামূলক সহজ গ্রুপে পড়েছে তারা। নক আউট পর্বে যাওয়ার দৌড়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই তাদের এগিয়ে রাখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ওয়েলসের বিপক্ষে থ্রি লায়নদের জয় নিয়ে সংশয় আছে খুব কম লোকেরই।

তারকা: ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা ওয়েন রুনি। সাবেক অধিনায়ক ও স্ট্রাইকারের কাঁধে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছেন হ্যারি কেন। টটেনহাম স্ট্রাইকারের নেতৃত্বে গত আসরে অংশ নিয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারো থ্রি লায়নরা বিশ্বমঞ্চে পা মাড়াবে তার অধিনায়কত্বেই। ২০০৫ সালে ইংলিশদের জার্সিতে অভিষেকের পর থেকেই দলে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন তিনি। কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের আশা-ভরসা তাকে ঘিরেই।

দেশের হয়ে এ পর্যন্ত ৭৫ ম্যাচে ৫১ গোল করেছেন কেন। আর দুই গোল করলে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ছুঁয়ে ফেলবেন পূর্বসুরি রুনিকে। এবারের বিশ্বকাপেই হয়তো রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন কেন। টটেনহাম স্ট্রাইকার আলো ছড়িয়েছিলেন গত বিশ্বকাপেও। ছয় গোল করে তিনিই জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট। এবারের আসরেও সর্বোচ্চ গোলদাতাদের লড়াইয়ে রাখা হচ্ছে তাকে।

প্রধান কোচ: রয় হজসন নির্বাসনে যাওয়ার পর ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান গ্যারেথ সাউথগেট। তার অধীনে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য পায়নি ইংল্যান্ড। তবু ইংলিশ এই কোচের ওপরই আস্থা রেখেছেন দেশটির ফুটবল প্রশাসন। এর কারণ, গত বিশ্বকাপের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে যাতে কোচ ট্রফি জিততে পারেন। গত বছর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তার ভুলের খেসারত দিয়ে ট্রফি হাতাছাড়া করেছে ইংল্যান্ড। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরোতে ব্যর্থ হওয়া সাউথগেট ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় স্বর্গ এনে দিয়ে পারেন কিনা সেটা দেখার অপেক্ষা।

কিংবদন্তি: ইংল্যান্ড দলে যুগে যুগে কিংবদন্তির আবির্ভাব ঘটেছে। তালিকাটা তৈরি করলে অনেক লম্বাই হবে। এদের মধ্য থেকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার খুঁজে নেওয়া কঠিন। তবে বিশ্বকাপের মাপকাঠিতে স্যার ববি চার্লটনকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বলা যায়। ১৯৯৬ সালে এই ফরওয়ার্ডের দারুণ নৈপুণ্যের সুবাদে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জেতে থ্রি লায়নরা। এরপর শিরোপা জেতা দূরে থাক, আর ফাইনালের টিকিটই পায়নি ইংল্যান্ড। ১৯৫৮ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক হয় চার্লটনের।

১৯৭০ সালে জাতীয় দলের বুট জোড়া তুলে রাখেন এই কিংবদন্তি। এ সময়ে ইংল্যান্ডের হয়ে ১০৬ ম্যাচে ৪৯টি গোল কনে তিনি। চার্লটন ছাড়াও ইংল্যান্ডের স্বপ্নজয়ের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন ডিফেন্ডার ববি মুর, জিমি গ্রেভেসের মতো কিংবদন্তিরা। বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জিততে না পারাদের মধ্যে আছেন গ্যারি লিনেকার, রায়ান রবসন, পিটার শিলটন, মাইকেল ওয়েন, অ্যালান শেরার, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, স্টিভেন জেরার্ড, ওয়েন রুনিদের মতো ফুটবলাররা।

ইংল্যান্ড:

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৫

গ্রুপ ‘বি’: ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ওয়েলস

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৩০-৩৮: ফিফার সদস্য নয়
১৯৫০: গ্রুপপর্ব
১৯৫৪: কোয়ার্টার ফাইনাল
১৯৫৮: গ্রুপপর্ব
১৯৬২: কোয়ার্টার ফাইনাল

১৯৬৬: চ্যাম্পিয়ন
১৯৭০: কোয়ার্টার ফাইনাল
১৯৭৪-৭৮: বাছাই
১৯৮২: দ্বিতীয় রাউন্ডের গ্রুপপর্ব
১৯৮৬: কোয়ার্টার ফাইনাল

১৯৯০: সেমিফাইনাল
১৯৯৪: বাছাই
১৯৯৮: শেষ ১৬
২০০২: কোয়ার্টার ফাইনাল
২০০৬: কোয়ার্টার ফাইনাল

২০১০: শেষ ১৬
২০১৪: গ্রুপপর্ব
২০১৮: সেমিফাইনাল

গ্রুপপর্বের ম্যাচ:

২১ নভেম্বর: ইংল্যান্ড-ইরান, সন্ধ্যা ৭টা
২৫ নভেম্বর: ইংল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র, রাত ১টা
২৯ নভেম্বর: ওয়েলস-ইংল্যান্ড, রাত ১টা