ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা যে কোনো ফুটবলারেরই স্বপ্ন। চার বছর অন্তর অন্তর আয়োজন করা হয় এই মহাযজ্ঞের। এ যাত্রায় দুই সপ্তাহ পরই শুরু হতে যাচ্ছে আরেকটি বিশ্বকাপ। আসরটি কার হতে যাচ্ছে, সেটা এখনই বলা কঠিন। তবে এটা ঠিক এবারের বিশ্বকাপ নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে যেতে পারে অনন্য উচ্চতায়। যেভাবে পেলে, ম্যারাডোনা, জিদানরা নিজেদের নিয়ে গেছেন মহাতারকার সিংহাসনে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ওই সব ফুটবলারকে, যাদেরকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরাদের সেরা বলা হয়ে থাকে।

maradona pele and zidaneবিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তিন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলে ও জিনেদিন জিদান

১. পেলে: বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল পেলে। প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতেন এই মহাতারকা। অনেকের মতে পেলে-ই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক করেন পেলে। ওই সময় তার পায়ে বল মানেই জাদুকরি মুহূর্ত ছিল। ফুটবলের ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ বলা হতো তাকে। ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা এখনো পেলের দখলে।

সেলেকাওদের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল করে অবসরে যান পেলে। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, মাঠের যে কোনো পজিশনেই খেলতে পারতেন তিনি। গোল করা, করানো কিংবা খেলাটি তৈরি করতে পেলে ছিলেন ফুটবলের এক রূপকথার রাজপুত্র। তাকে নিয়ে বিশেষণের শেষ নেই। ফ্রান্সের কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনির প্রত্যয়নপত্রটাই বোধহয় পেলেকে নিয়ে সম্ভাব্য সেরা ছিল। প্লাতিনি বলেছিলেন, ‘এবং পেলের মতো খেলা মানে ঈশ্বরের মতো খেলা।’

২. ডিয়েগো ম্যারাডোনা: ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। ওই আসরেই কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি গোল করেন তিনি। ৬০ মিটার দূর থেকে বল টেনে নিয়ে ইংলিশ পাঁচ ফুটবলারকে ঘোল খাইয়ে ম্যারাডোনা যেভাবে গোলটি করেছিলেন সেটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

ওই ম্যাচেই হাত দিয়ে ইংল্যান্ডের জালে বল জড়ান তিনি। যা এড়িয়ে গেছে রেফারির চোখ। পরবর্তীতে ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোলটিকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। দেশের হয়ে ৯১টি ম্যাচে ৩৪টি গোল করের তিনি। পরের আসরের ফাইনালে জার্মানির কাছেই হারেন ম্যারাডোনা অ্যান্ড কোং। ১৯৯১ সালে নিষিদ্ধ কোকেনসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। ছাড়া পেয়ে ফুটবলেও ফিরে আসেন ছিয়াশির বিশ্বজয়ের নায়ক।

কিন্তু ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ম্যারাডোনা শেষ করতে পারেননি। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে নিষিদ্ধ হন। ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ারেও সফল ছিলেন ম্যারাডোনা। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির ইতিহাসের সেরা কিংবদন্তি তিনি। অনেকের মতে, মাদকদ্রব্যে আসক্ত না হলে ম্যারাডোনা আরও সাফল্য পেতে পারতেন। ছাড়িয়ে যেতে পারতেন পেলেকে। ২০২০ সালের নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬০ বছর বয়সী ম্যারাডোনা। বলা বাহুল্য, খেলোয়াড় ভূমিকায় যতটা সফল ছিলেন ম্যারাডোনা, ততটাই ব্যর্থ ছিলেন কোচ হিসেবে।

৩. জিনেদিন জিদান: ফ্রান্সের স্বপ্নপূরণের নায়ক জিনেদিন জিদান। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো সোনালি ট্রফি জেতে ফরাসিরা। ফাইনালে জোড়া গোল করে তিনিই হয়ে যান ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসের সেরা তারকা। কেউ কেউ তো তাকে সর্বকালের সেরাদের কাতারেও রাখেন। ২০০২ বিশ্বকাপটা খেলতে পারেননি জিদান। চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন মহাযজ্ঞ থেকে।

পরের আসরে জিজুর প্রত্যাবর্তনটা ছিল স্মরণীয়। জিদান ফাইনালে নিয়ে যান ফ্রান্সকে। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ইতালির কাছে হেরে যায় ফরাসিরা। সেই ম্যাচে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মার্কো মাতোরাজ্জিকে ঢুঁস মেরে বসেন জিদান! যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে মেখে দিয়েছে কলঙ্কের কালিমা। জিদান মহাতারকা হলেও সেই বিতর্ক আর কলঙ্ক মুছতে পারেননি। তবে দেশে ফেরার পর তাকে হাজার হাজার মানুষ যেভাবে রাজপথে দাঁড়িয়ে তাকে কুর্ণিশ করেছিলেন সেটা জিজুর দুঃস্বপ্নকে অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছিল।

ফ্রান্সের বর্ণিল অধ্যায়ে ১০৮ ম্যাচে ৩১টি গোল করেছিলেন তিনি। খেলোয়াড় ভূমিকায় নিজেকে প্রমাণ করা জিদান কোচ হিসেবেও অনন্য। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র কোচ হিসেবে পরপর তিনটি শিরোপা জেতেন তিনি। সবকটিই রিয়াল মাদ্রিদের ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে। খেলোয়াড় জিদান নাকি কোচ জিদান কে সেরা? এ নিয়ে একটা সময় দ্বিখন্ডিত হয়ে গিয়েছিল ফুটবল দুনিয়া।

৪. ইয়োহান ক্রুইফ: তিনবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী ও আধুনিক ফুটবলের জনক বলা হয় ইয়োহান ক্রুইফকে। ফুটবল দর্শন এবং খেলাটিকে ডাচ এই কিংবদন্তিই নিয়ে যান শিল্পের পর্যায়ে। ‘তিকি তাকা’ ছন্দের প্রবর্তক তিনি। ফুটবলের ট্রাজেডিক হিরো বলায় হয় এই ক্রুইফকে। কখনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তার। তবে ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন তিনি।

সেটা খেলোয়াড় এবং কোচ দুই ভূমিকাতেই। নেদারল্যান্ডসের হয়ে ৪৮টি ম্যাচে ৩৩টি গোল করেছেন ক্রুইফ। তিনি গোল করেছেন এমন ম্যাচ কখনো হারেনি ডাচরা। ১৯৭৪ সালে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বিদায় নেয় ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে ক্রুইফকে থামান জার্মান ডিফন্ডার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। পরের বিশ্বকাপ ক্রুইফ খেলতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে কিডন্যাপিংয়ের অভিযোগ ওঠে।

৫. জিমি গ্রেভেস: বলা হয়ে থাকে ফুটবল খেলার সৃষ্টি হয়েছে ইংল্যান্ডে। সেই তুলনায় ইংলিশরা তেমন সাফল্য পায়নি। এ পর্যন্ত ২১টি বিশ্বকাপের কেবল একটিই জিততে পেরেছে তারা। সেটাও ১৯৬৬ সালে; ঘরের মাঠে। স্বাগতিকদের স্বপ্নপূরণের আসল নায়ক কে, স্যার ববি মুর, স্যার ববি চার্লটন নাকি জিমি গ্রেভেস? এদের মধ্যে সেরা বেছে নেওয়া কঠিন।

কারণ ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা হিসেবে একজনকে চিহ্নিত করা সহজ নয়। তবে তখনকার সময়ে মানুষজন বেশি ভালোবেসেছে গ্রেভেসকে। যদিও ফাইনাল খেলতে পারেননি তিনি। সেমিফাইনালে ইনজুরিতে পড়ায় ১৪টা সেঁলাই নিয়ে ফাইনালটা দর্শক সারিতে বসেই দেখেছেন গ্রেভেস। ইংল্যান্ডের জার্সিতে রেকর্ড (সর্বোচ্চ) ছয়টি হ্যাটট্রিক আছে সাবেক এই স্ট্রাইকারের।

৬. ফেরেঙ্ক পুসকাস: ফুটবলে চিরকালীন আক্ষেপগুলোর একটি সোনালি প্রজন্মের হাঙ্গেরির বিশ্বকাপ জিততে না পারাটা। আর সেই গল্পের ট্রাজেডিক হিরো পেরেঙ্ক পুসকাস। বর্ণিল ক্যারিয়ারের ১১ বছরের অধ্যায়ে কেবল একটি ম্যাচই হেরেছেন তিনি। সেটা ১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে! টুর্নামেন্টজুড়ে দাপট দেখালেও সেদিনই পুসকাস পারেননি কিছু করতে।

হাঙ্গেরির জার্সিতে ৮৫ ম্যাচে ৮৪টি গোল করেছেন পুসকাস। স্পেনের হয়েও চারটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। পুরো ক্যারিয়ারে ৭০৫ ম্যাচে ৭০২টি গোল আছে হাঙ্গেরিয়ান ফরওয়ার্ডের নামের পাশে। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বড় তারকা। বিশ্বকাপেরও অন্যতম সেরা তারকা পুসকাস।

৭. লোথার ম্যাথুস: জার্মানির ফুটবলে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫০ বার মাঠে নেমেছেন লোথার ম্যাথুস। দেশের হয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানদের জেতান বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৫টি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা এখনো তার দখলে। নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ম্যাথুসকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়। ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিজের দেখা সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন তিনি।

৮. মিরোসাভ ক্লোসা: লোথার ম্যাথুস, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের মতো মহাতারকা না হলেও মিরোসাভ ক্লোসা বিশ্বকাপের অন্যতম নায়ক। দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলা এই স্ট্রাইকার ট্রফি জেতেন ২০১৪ সালে; ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ওই আসরে চারটি গোল করে তিনি ভেঙে ফেলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদোর রেকর্ড। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা এখন ক্লোসার দখলেই। জার্মানদের হয়ে ১৩৭ ম্যাচে ৭১টি গোল করেছিলেন ক্লোসা। এরমধ্যে আছে বিশ্বকাপের ১৬ গোল।

৯. রোনালদো দ্য লিমা: সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বলা হয় রোনালদো লিমাকে। তাকে দ্য ‘ফেনোমেনন’ নামেও চিনে থাকে ফুটবল দুনিয়া। ব্রাজিলের হয়ে ৯৮ ম্যাচে ৬২টি গোল করেছেন এই কিংবদন্তি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রোনালদো জেতেন বিশ্বকাপ ট্রফি। সেটা ১৯৯৪ সালে। তবে ২০০২ সালের বিশ্বকাপটাই ছিল তার সেরা; জেতেন দলীয় শিরোপা ও গোল্ডেন বুট। রোনালদো ফাইনালে করেন জোড়া গোল। পরের বিশ্বকাপেই সর্বোচ্চ ১৫তম গোলটি করেন তিনি। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ, শট অ্যাকুরেসি তাকে অন্যসব ফুটবলারের চেয়ে আলাদা করে ফেলে।

১০. ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার: খেলোয়াড় এবং কোচ দুই ভূমিকায় বিশ্বের মাত্র তিনজনই বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিলেন। তারা হলেন ব্রাজিলের মারিও জাগালো, ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশাম এবং জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। ডিফেন্ডার হলেও ১০৩ ম্যাচে ১৪টি গোল আছে বেকেনবাওয়ারের। তার নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ জিতেছিল। ১৯৬৬ সালেও স্বপ্নপূরণের খুব কাছে ছিল জার্মানরা।

কিন্তু ফাইনালে তারা হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। পরের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালেই মধুর প্রতিশোধ নেয় বেকেনবাওয়ারের জার্মানি। ১৯৯০ বিশ্বকাপে তার কোচিংয়েই ফের জার্মানরা জেতে ট্রফি। ২০০৬ সালে বেকেনবাওয়ারের প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপের স্বাগতিক স্বত্ব পায় জার্মানি। যদিও পরবর্তীতে ফিফার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ স্বাগতিক স্বত্ব দেওয়া নিয়ে দুর্নীতির প্রমাণ মেলে।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.