সার্বিয়া-কসোভো জাতিগত উত্তেজনা

কসোভোতে নিজস্ব লাইসেন্স প্লেট প্রবর্তনকে কেন্দ্র করে সার্বিয়ার সঙ্গে জাতিগত উত্তেজনা মাথাচাড়া দিয়েছে। কসোভোর উত্তরাঞ্চলে সংখ্যালঘু সার্বরা আগের মতো সার্বিয়ান লাইসেন্স প্লেট ও নিবন্ধন নিয়ে গাড়ি চালানোর অধিকার বহাল রাখার দাবিতে সরকারি চাকরি ছাড়তে শুরু করেছে। সাবেক প্রদেশ কসোভোতে সার্বদের এ পদক্ষেপের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে সার্বিয়া।

কসোভো পুলিশের পোশাক খুলে ফেলেছেন সার্ব সদস্যরা

২০০৮ সালে স্বাধীন হওয়া কসোভোকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি সার্বিয়া। কসোভোর উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজার সার্ব জনগোষ্ঠী এখনও সার্বিয়া কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত সাবেকী দিনের লাইসেন্স প্লেট নিয়ে গাড়ি চালাতে চাইছে। লাইসেন্স প্লেট ইস্যুতে সার্ব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কসোভো কর্তৃপক্ষের টানাপড়েন চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।

এর আগে কসোভো সরকার নতুন লাইসেন্স প্লেট গ্রহণের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জানায়, নভেম্বর মাস থেকে যারা স্বাধীনতা-পূর্ব কালের লাইসেন্স প্লেটে গাড়ি চালাবে, তাদের জরিমানা করা হবে। একইভাবে, আগামী বছরের ২১ এপ্রিলের মধ্যে যে সব গাড়ির মালিক নিবন্ধন নাম্বার পাল্টাতে বাধ্য হবেন, তাদের গাড়ি জব্দ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কসোভো সরকারকে লাইসেন্স প্লেট সংক্রান্ত নিয়মের প্রয়োগ ১০ মাস পেছানোর আহ্বান জানায়। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে কসোভোর প্রেসিডেন্ট আলবিন কুর্তি বলেছেন, লাইসেন্স প্লেটের নিয়মটি সার্বভৌমত্ব চর্চার বিষয়, এর চেয়ে কিছু কম বা বেশি নয়।

লাইসেন্স প্লেটের নিয়ম বাতিল ও কসোভোর উত্তরাঞ্চলীয় সার্ব পৌরসভাগুলোকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার দাবিতে সার্বরা গতকাল থেকে কসোভো সরকারের চাকরি ছাড়তে শুরু করেছে। সার্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের এক বৈঠকের পর তারা এ পদক্ষেপ নেন। সার্ব জাতিভুক্ত মিনিস্টার অব কমিউনিটিজ অ্যান্ড রিটার্নস গোরান রাকিচ কসোভো সরকার থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

রাকিচ বলেন, বিভিন্ন পৌরসভা, আদালত, পুলিশ, পার্লামেন্ট ও প্রশাসনে সার্ব জনগোষ্ঠীর যেসব সদস্যরা কর্মরত আছেন, তারা সবাই চাকরি ছাড়বেন। কসোভো সরকার লাইসেন্স সংক্রান্ত আদেশ বাতিল না করলে সার্বরা চাকরিতে ফিরবে না। এ আদেশ বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি সার্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোকে অধিকতর স্বায়ত্বশাসন দিয়ে সার্ব পৌরসভাগুলোর একটি জোট গঠন করতে হবে।

কসোভো পুলিশের সার্ব সদস্যরা গতকাল থেকে কর্মস্থলে পুলিশের পোশাক ছেড়ে আসছেন। উত্তরাঞ্চলীয় সার্ব অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ‘দিস ইজ সার্বিয়া’ লেখা পোস্টার লাগিয়েছে স্থানীয়রা। কসোভোর সার্বদের এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থন জানিয়েছে সার্বিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনা বার্নবিচ বলেছেন, সার্বিয়া সরকার কসোভোতে আমাদের সাহসী ও গর্বিত মানুষদের সঙ্গে আছে।

কসোভোর প্রেসিডেন্ট আলবিন কুর্তি সার্ব জনগোষ্ঠীর প্রতি কসোভোর প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কট ও পরিত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সবাইকে সেবা দেয়। আপনাদের প্রত্যেককে সেবা দেয়। রাজনৈতিক প্রচারণা ও ভূরাজনৈতিক পাশা খেলার গুটিতে পরিণত হবেন না।