কাতার বিশ্বকাপ: সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন পোল্যান্ডের

বড় কোনো দল নয় পোল্যান্ড। মাঝারি শক্তির। বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠতে পারাটাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পোলিশদের। সেই পরীক্ষায় উতরে গিয়ে কাতারের মহাযজ্ঞে নাম লিখিয়েছে পোল্যান্ড। তাদের সাফল্যের রূপকার রবার্ট লেভানডফস্কি। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে ইউরোপের দেশটি। পোল্যান্ডের প্রাথমিক লক্ষ্য গ্রুপপর্বের বাধা পাড়ি দেওয়া। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেললেও ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি পোল্যান্ড। এবার অনেক দূরে চোখ পোল্যান্ডের।

আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের মূল ভরসা বার্সেলোনা স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি

অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারলেই তাদের অভিযান সফল বলা যায়। যদিও ইতোপূর্বে সেমিফাইনালে ওঠার অভিজ্ঞতা আছে দলটির। দুইবার বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা দল হয়েছিল তারা। তবে সবশেষ পোল্যান্ডকে নক আউট পর্বে দেখা গেছে ৩৬ বছর আগে। এবারো তারা গ্রুপপর্বে আটকে যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা গ্রুপে তাদের দুই প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো। গত কয়েকটি বিশ্বকাপে অন্তত শেষ ষোলো পর্যন্ত উঠেছে দল দুটি। তাই পোল্যান্ডকে প্রথম রাউন্ডেই দিতে হবে বড় পরীক্ষা।

তারকা: পোল্যান্ড ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা ভাবা হয় রবার্ট লেভানফস্কিকে। লেভার দুর্ভাগ্য, লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সময়ে জন্ম তার। বছরের পর বছর এই দুজনের ছায়া তলে ছিলেন লেভা। ২০২০ সালে অবশ্য দুজনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ব্যালন ডি’অর দেওয়া হয়নি। বঞ্চিত হন লেভা। তবে ফিফা বর্ষসেরার মুকুট ওঠে তার হাতে। ওটাই ছিল লেভার ক্যারিয়ারের সেরা বছর। তবু হাল ছাড়েননি লেভা। ক্লাব ফুটবলে প্রতি মৌসুমেই গোলের বান ছুটিয়েছেন তিনি। বায়ার্ন মিউনিখের বহু রেকর্ড তার দখলেই।

এই মৌসুমে বার্সেলোনায় এসেও আলো ছড়াচ্ছেন লেভা। তবে ক্লাব ফুটবলে তাকে যতটা দুর্দান্ত দেখা যায় জাতীয় দলে ততটা নয়। কারণ লেভা যে ‘ছোট’ দলের বড় তারকা। ফুটবলে যে দলীয় পারফরম্যান্স ছাড়া নির্দিষ্ট কারোর সেরা হয়ে ওঠা কঠিন। এবারের বিশ্বকাপে কঠিন সেই চ্যালেঞ্জটাই নিতে হচ্ছে তাকে। তার নেতৃত্বেই আসন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেবে পোল্যান্ড। ২০০৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। দেশের হয়ে এ পর্যন্ত ১৩৪ ম্যাচে ৭৬টি গোল করেছেন লেভা। ৩৪ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকারের জন্য কাতারই হতে যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ।

প্রধান কোচ: খেলোয়াড়ি জীবনে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি চেসল মিকনিভিচ। পরে ২০০৩ সালে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ৫২ বছর বয়সী কোচ ক্লাব ফুটবলে ভালো একজন কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পোল্যান্ডই তার প্রথম জাতীয় দল। ভাগ্যবশত দায়িত্ব পেয়েছেন মিকনিভিচ। পোল্যান্ডকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ পর্বে তুলে সরে দাঁড়ান প্রধান কোচ পাওলো সুসা। পরে গত ৩১ জানুয়ারি মিকনিভিচের হাতে তুলে দেওয়া হয় লেভানডফস্কিদের দায়িত্ব। চুক্তি হয় এক বছরের। তার অধীনেই প্লে-অফ বাধা পেরিয়ে বিশ্বকাপের মূলপর্বে টিকিট কাটে পোল্যান্ড। তার সামনে এখন বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ। যেখানে ভালো করতে পারলে মিকনিভিচের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারে পোল্যান্ড। প্রশ্ন হচ্ছে নতুন কোচের অধীনে পোলিশরা কি পারবে কাতারের মহাযজ্ঞে নিজেদের মেলে ধরতে?

কিংবদন্তি: পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি লেভানডফস্কি। তিনি ছাড়াও কয়েকজন কিংবদন্তি আছে দেশটির ফুটবলে। সর্বপ্রথমে নাম আসবে উডজিমিয়ের্জ লুবানস্কি। বিশ্বকাপে পোল্যান্ড যে দুবার তৃতীয় সেরা দল হয়েছিল সেটা তার কারণেই। লুবানস্কির সময়টাকে পোল্যান্ড ফুটবলের সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬৩ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় তার। ১৯৮০ সালে অবসর নেন লুবানস্কি। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার আগ মুহূর্তে তিনিই ছিলেন পোল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে পোলিশদের হয়ে ৭৫ ম্যাচে ৪৮ গোল করেছিলেন লুবানস্কি।

পোল্যান্ড

গ্রুপ ‘সি’: আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, সৌদি আরব

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ২৬

বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা:

১৯৩০: অংশ নেয়নি
১৯৩৪: বাছাইপর্ব
১৯৩৮: শেষ ১৬
১৯৫০: বাছাইপর্ব
১৯৫৪: নাম প্রত্যাহার

১৯৫৮-৭০: বাছাইপর্ব
১৯৭৪: তৃতীয়স্থান
১৯৭৮: গ্রুপপর্ব
১৯৮২: তৃতীয়স্থান
১৯৮৬: শেষ ১৬

১৯৯০-৯৮: বাছাইপর্ব
২০০২-০৬: গ্রুপপর্ব
২০১০-১৪: বাছাইপর্ব
২০১৮: গ্রুপপর্ব

গ্রুপপর্বের সূচি:

২২ নভেম্বর: মেক্সিকো-পোল্যান্ড
২৬ নভেম্বর: পোল্যান্ড-সৌদি আরব
৩০ নভেম্বর: পোল্যান্ড-আর্জেন্টিনা