স্টোকস এক যোদ্ধার নাম
- Details
- by খেলাধুলা প্রতিবেদক
৪৯ বলে ৫২। হোক না না অজেয় ইনিংস। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এ আর তেমন কী! মন্থর গতির এই হাফসেঞ্চুরি ও স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় ইনিংসটার মাহাত্ম্য বোঝানো কঠিন। কিন্তু ফাইনালের প্রেক্ষাপট ভাবলে বেন স্টোকসের এই অপরাজিত ইনিংসটা হয়ে উঠল মহামূল্যবান।
পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের পর উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ইংল্যান্ড
কুড়ি ওভারের ক্রিকেট মহাযজ্ঞের অষ্টম আসরের শিরোপা ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল তাতে। আজ মেলবোর্নে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই ফরমেটে শিরোপা জিতল ইংল্যান্ড। বল হাতে আগুন ঝরিয়ে স্যাম কারান অবধারিতভাবেই পেয়েছেন ফাইনাল সেরার স্মারক।
বোলিং ইনিংসে নায়ক কারান হলেও, ব্যাটিং ইনিংসের কাণ্ডারি ছিলেন স্টোকস। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর পোড় খাওয়া এই অলরাউন্ডারই পথ দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। উইকেটের রাশ টেনে ধরে আস্কিং রেটের সঙ্গে বোঝাপড়াটা ভালোই করেছেন স্টোকস। পরিস্থিতি বিবেচনায় তার ১০৬.১২ স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিং-ই হয়ে গেল যথেষ্ট।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের পরপর চার বলে চারটি ছক্কা হজমের পর হতাশ বেন স্টোকস
কারান ফাইনালের নায়ক হলেও লাইম লাইটে বেশি থাকলেন স্টোকসই। তাকে পাদ প্রদীপে আনছে অতীত ইতিহাস। শান্ত সাগরে তার হাত ধরেই ডুবেছিল ইংল্যান্ডের স্বপ্নের জাহাজ। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ ওভারে ১৮ রান আগ রাখতে পারেননি স্টোকস।
কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের কাছে হজম করলেন পরপর চারটি ছক্কা। শিরোপা জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হতাশা, অবিশ্বাস আর লজ্জায় সেদিন ইডেন গার্ডেন্সে জার্সি দিয়ে মুখ ঢেকেছেন স্টোকস। দেশবাসীর সামনে খলনায়কবনে যাওয়ার পাওয়ার আসলে এমন হতশ্রী চেহারা দেখানো যে কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষেই কঠিন।
প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন এই বেন স্টোকস
কলকাতার সেই ফাইনালের পর অনেকেই স্টোকসের ক্যারিয়ারের শেষটা দেখে ফেলেছিলেন। পরে তার ব্যক্তিগত জীবনও টালমাটাল হয়ে পড়ে। ব্রিস্টলে মারপিট করে জাতীয় দল থেকে হয়েছেন নির্বাসিত। মাড়াতে হয়েছে আলাদাতের চৌকাঠ। বিপর্যয়ের চূড়ান্ত কিনারায় চলে যাওয়া সেই স্টোকসই ফিরে এলেন বীরদর্পে। শাপমোচন করেছেন ২০১৯ সালে; লন্ডনের বিখ্যাত লর্ডস স্টেডিয়ামে।
নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ড যে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপটা জিতল সেই গল্পের রূপকথার নায়ক ছিলেন এই স্টোকসই। এরপর চিরশত্রু অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে অ্যাশেজ জয়ে রাখলেন বড় ভূমিকা। তবু একটা খচখচানি থেকেই যায়।
টি-টোয়েন্টির প্রায়শ্চিত্ত কি অন্য দুই সংস্করণে দিয়ে করা যায়! তাই ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ স্টোকসের জন্য হয়ে থাকল দুঃস্মৃতি ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মলম। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুললেন তিনি। টি-টোয়েন্টির হিসেবটা টি-টোয়েন্টিতেই চুকিয়ে দিলেন স্টোকস।
ইংল্যান্ডের উৎসব নিশ্চিত হওয়ার পর হার না মানা এই যোদ্ধাকে কুর্নিশ জানিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। সাধারণ সমর্থকরা তো আছেনই, স্টোকসকে টুপি খোলা অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রিকেটের অনেক রথি-মহারথি। এমনকি বাদ যাননি ইংল্যান্ডের ফুটবল কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারও! এমন রাত প্রাপ্তি যে স্বপ্নের চেয়েও বেশিকিছুর।
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর