ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে রাজনীতি বহু বছরের পুরোনো। বেনিতো মুসোলিনি, অ্যাডলফ হিটলারের মতো ব্যক্তিদের প্রভাবের শিকার হয়েছিল বিশ্বকাপ। কিন্তু এই দুজনকেও ছাড়িয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার সামরিক জান্তা ভিদেলা। ১৯৭৮ সালে তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘এই বিশ্বকাপ হবে শান্তির ছায়াতলে।’ অথচ বাস্তবতা হলো এর ঠিক বিপরীত। সবচেয়ে ‘নোংরা’ বিশ্বকাপ আয়োজন হলো আর্জেন্টাইন সেনাবাহিনীর অধীনেই! যেখানে বাজিমাত করে স্বাগতিকরা। যেতে প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি।

fifa world cup 1978ইতিহাসের ‘নোংরা’ আসরে আর্জেন্টিনার বাজিমাত

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাজুড়ে চলছিল ভয়াবহ আন্দোলন। বর্বরতার চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছিল তখন। জীবন যেখানে অনিশ্চিত ফুটবল সেখানে স্রেফ গৌণ একটা ব্যাপার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনা হলো এর ঠিক উল্টো। ক্ষুধা, দারিদ্রতা ভুলে গোটা আর্জেন্টিকে ডুবে যেতে হয়েছে ফুটবলে। মানিবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বকাপ হয়ে গেল সেটা।

সামরিক শাসন নিয়ে এমনিতেই প্রবল বিতর্কে ছিলেন ভিদেলা। তিনি বুঝতে পারছিলেন সব অপবাদ আড়াল করে দিতে পারে এই আসরটি। খুব স্বাভাবিকভাবেই সুযোগটা নিলেন ভিদেলা। তার একচ্ছত্র আধিপত্যে চলল বিশ্বকাপের পুরো আসর। টুর্নামেন্ট আয়োজন থেকে শুরু থেকে শেষ অবধি ছিল বিতর্কে ঠাসা। দল হিসেবে মাঠের পারফরম্যান্সে সফল হলেও আয়োজক হিসেবে তুমুলভাবে সমালোচিত হয় আর্জেন্টিনা।

বিশ্বের অনেক দেশ এখান থেকে বিশ্বকাপ সরানোর দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সেটা হয়নি ফিফার কারণে। আর্জেন্টিনাতেই বিশ্বকাপ রাখার সিদ্ধান্তে অটল ছিল ফিফা। তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই তা বর্জন করেছিল অনেক দেশ। এমনকি আগের আসরের রানার্সআপ নেদারল্যান্ডসও হুমকি দিয়ে বসেছিল বিশ্বকাপ বয়কটের। যদিও বহু নাটকের পর বাছাইপর্ব খেলতে নামে ডাচ শিবির।

তবে মূলপর্বের টিকিটের জন্য বেগ পেতে হয়নি তাদের। কিন্তু মূলপর্বে আবার অংশ নেননি দেশটির ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা ইয়োহান ক্রুইফ। তাকে ছাড়া ফাইনাল পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল ডাচরা। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের ওপর মানসিক যতটা সম্ভব নির্যাতন করেছে আর্জেন্টাইনরা। বিশ্বকাপটা শেষ হতেই যেন বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছে ইউরোপিয়ান দলটি!

বাছাইপর্বে হয়েছে অনেক অঘটন। মূলপর্বের টিকিট পায়নি চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া, ইংল্যান্ড, উরুগুয়ের মতো দলগুলো। মূলপর্বেও থাকল চমক। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় এশিয়া ও আফ্রিকান দুই দল ইরান ও তিউনিশিয়া। টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড রবিন লিগ রাউন্ড পদ্ধতিতে।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রুইফের স্ত্রীকে অপহরণ করেন দুর্বৃত্তরা। পরে স্ত্রীকে ফেরত পান ডাচ কিংবদন্তি। ডাচ সংবাদমাধ্যমের দাবি ছিল, স্ত্রীর অনুরোধে বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন ক্রুইফ। কিন্তু তার অভাব খুব একটা টের পায়নি নেদারল্যান্ডস। আসরজুড়ে দাপুটে ফুটবল খেলেছে তারা। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি তাদের। টানা দ্বিতীয় ফাইনাল হারতে হয় তাদের।

আর্জেন্টিনার এই স্বপ্নযাত্রার প্রধান সারথি ছিলেন মারিও কেম্পেস। প্রতি ম্যাচে গোল করাটা এক প্রকার নিয়মে পরিণত করে ফেলেছিলেন এই কিংবদন্তি। পুরো আসরে সর্বোচ্চ ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছিলেন তিনি। ফাইনালেও কেম্পেসের গোলে শুরুতে লিড নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ের গোলে ৩-১ ব্যবধানে জেতে স্বাগতিকরা।

আর্জেন্টিনা বিদায় নিতে পারতো দ্বিতীয় রাউন্ডেই। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিততে হতো স্বাগতিকদের। আর্জেন্টাইনরা জিতল ৬-০ গোলে। পরে জানা যায়, ল্যাটিন দুই দেশের লড়াইটা আসলে পাতানো ম্যাচ ছিল। ভিদেলার চাপেই অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পেরু। ওই সময় অনেকেই দাবি করেন, পেরুকে হুমকি দেয়ছিলেন স্বৈরশাসক ভিদেলা। কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন, আর্জেন্টিনায় ১৩ জন পেরুভিয়ান নাগরিক বন্দি ছিল।

তাদের মুক্তি এবং ফুটবলারদের নিরাপদে দেশে ফেরার শর্তে ম্যাচটি ছেড়ে দিয়েছিল পেরু। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনায় সফল হন ভিদেলা। ফাইনালে বাজিমাত করে আর্জেন্টিনা। যদিও তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বীকৃতি দেননি অনেক রথী-মহারথী। খোদ বিশ্বকাপজয়ী এক আর্জেন্টাইন যেমন বলেছিলেন, ‘ওই বিশ্বকাপটা খেলা ঠিক হয়নি। ছিয়াশির মতো হলে আজীবন বুকে লালন করতাম ১৯৭৮ বিশ্বকাপটা।’

সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, ওই আসরের ফেয়ার প্লে’র অ্যাওয়ার্ডটাও পেয়েছিল স্বাগতিক আর্জেন্টিনাই!

একনজরে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: আর্জেন্টিনা
চ্যাম্পিয়ন: আর্জেন্টিনা
রানার্সআপ: নেদারল্যান্ডস
তৃতীয়স্থান: ব্রাজিল
অংশগ্রহণ: ১৬টি

ভেন্যু: ৬টি (৫ শহর)
মোট ম্যাচ: ৩৮টি
মোট গোল: ১০২টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ২.৬৮টি
গোল্ডেন বুট: মারিও কেম্পেস (৬ গোল, আর্জেন্টিনা)

উদীয়মান সেরা: অ্যান্তনিও কাবরিনি (ইতালি)
ফেয়ার প্লে পুরস্কার: আর্জেন্টিনা
মোট দর্শক: ১৫৪৫৭৯১
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৪০৬৭৯

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.