অবশেষে ইতালির হাতে উঠেছে চতুর্থ শিরোপা। ফ্রান্সকে কাঁদিয়ে আজ্জুরিরা জেতে ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ। আসরটি অনেক কারণেই আলোচনার ঝড় তুলেছিল। কী ছিল ওই টুর্নামেন্টে! কিন্তু বিশ্বকাপটা শেষ হলো বিস্ময়কর একটি ঘটনা দিয়ে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মার্কো মাতোরাজ্জিকে ঢুঁস মেরে লাল কার্ড দেখেন ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওটাই হয়ে গেল জিজুর শেষ ম্যাচ।

world cup 2006জিনেদিন জিদান

জিদানের সামনে সুযোগ ছিল আরও একটি বিশ্বকাপ জয়ের। হয়ে যেতে পারতেন সর্বকালের সেরা। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই চিরকালীন আক্ষেপ ঘুচিয়েছিল ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে ঘরের মাঠে দেশকে জিজু জেতান স্বপ্নের প্রথম ট্রফি। পরে অবসরে চলে যান জিদান। অবসর ভেঙে ফিরেও এসেছেন তিনি। ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে যে ফ্রান্স উঠল সেটার আসল নায়ক এই জিজুই ছিলেন।

জার্মানি বিশ্বকাপে ‘বুড়ো হাড়ের ভেলকি’তে বিস্মিত হয়েছিল ফুটবল দুনিয়া। জিদান-জাদুতে আরেকবার বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল ছবি ও কবিতার দেশটি। ফাইনালে ইতালিয়ানরা নয়, ফরাসিরাই ছিল ফেভারিট। কারণটা অবিধারিতভাবেই জিদান। ম্যাচ শুরুর কুড়ি মিনিটের মধ্যে জমে উঠেছিল বার্লিনের ফাইনালটা। পাল্টাপাল্টি গোলে স্কোর লাইন তখন ১-১!

পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা জিদান ফাইনালেও আগুন ঝরাতে শুরু করেন। ম্যাচে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল ফ্যাবিও ক্যানাবেরার ইতালি। অবস্থা প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় কূটকৌশলে জিদানকে সবার অন্তরালে ক্রমেই ক্ষেপিয়ে তোলেন ইতালি ডিফেন্ডার মাতারাজ্জি। গালাগাল করেন ফ্রেঞ্চ প্রাণভোমরার পরিবার তুলে। ব্যস! তাতেই ভেঙে গেল জিদানের ধৈর্যের বাধ। মেজাজ হারিয়ে মাতারাজ্জিকে ঢুঁস মেরে বসেন এই কিংবদন্তি।

অনিবার্যভাবেই শাস্তি হিসেবে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে জিদানকে। তার এই ঢুঁস-কাণ্ড এবং লাল কার্ডটাই শেষ অবধি ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ফাইনালের। ভাগ্যও এদিন সহায় ছিল না ফ্রান্সের। নির্ধারিত দেড় ঘণ্টা এবং অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত কোনো রকম ড্র করতে পেরেছিল ফরাসিরা। জিজুবিহীন ফ্রান্স টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হেরে যায়। জিজুকে কী বলেছিলেন সেটা দীর্ঘ দশ বছর পর জানান মাতারাজ্জি।

জিদানের ওই পাগলামিটা কলঙ্কিত করেছিল বার্লিনের ফাইনাল ও বিশ্বকাপকে। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনাটা বাদ দিলে জার্মানির আসরটা ছিল ইতিহাসের অন্যতম সফল বিশ্বকাপ। আসরের শুরু এবং শেষ পর্যন্ত অতিথি আপ্যায়নে সবাইকে মুগ্ধ করেছিল হিটলারের দেশ। তবে দ্বিতীয়বার স্বাগতিক হওয়ার জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল জার্মানিকে। জুরিখে তিন পর্বের ম্যারাথন ভোটযুদ্ধে জার্মানরা হারায় মহাদেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড ও আফ্রিকার দুই দেশ মরক্কো ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আসরের শুরু থেকেই বাজির দরে শীর্ষে ছিল জার্মানি। বালাক, ক্লোসা, পোডলস্কির মতো একঝাঁক তারকা ছিল স্বাগতিক শিবিরে। অথচ তুখোড় ছন্দে থাকা সেই দলটাকে সেমিফাইনালে থামিয়ে দেয় টুর্নামেন্টের ‘আন্ডারডগ’ ইতালি। তবে নিজেদের স্বপ্নভঙ্গের আগে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে দেয় জার্মানি।

টাইব্রেকারে হেরে কপাল পুড়ে আর্জেন্টাইনদের। হট ফেভারিট আর্জেন্টিনার এমন বিদায়ে হতাশ হয়েছিলেন অনেকেই। তবে আশার কথা হচ্ছে- এই আসর দিয়েই বিশ্ব ফুটবলে উত্থান হয় গত কয়েক বছরের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির। কিন্তু দলের হারটা ডাগ আউটে বসেই দেখেন তিনি। শেষ আটে থেমে যায় আসরের আরেক ফেভারিট ব্রাজিলের পথচলা। জিদান ও থিয়েরি অঁরির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কাছে তারকাঠাসা সেলেকাওরা হেরে যায় ১-০ গোলে।

মেসির মতো জার্মানি বিশ্বকাপ দিয়ে আবির্ভাব ঘটে আরেক প্রতিভা- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। রাজসিক পারফরম্যান্সে নিজের আগামনী বার্তা দিয়েছিলেন ‘সিআর সেভেন।’ পর্তুগালের ওই আসরে সেমিফাইনালে ওঠার পেছনে যে দুজন নায়ক ছিলেন তাদের একজন ছিলেন এই রোনালদোই। অন্যজন অধিনায়ক লুইস ফিগো। এ যুগলের পারফরম্যান্সে ভর করে শিরোপার স্বপ্ন দেখেছিলেন পর্তুগিজরা।

কিন্তু পর্তুগালের স্বপ্নটা ধূসর হয়ে গেছে ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে। তবে ফাইনালে ওঠার লড়াইটি নয়, ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে নক আউট পর্বের শুরুতে তাদের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ম্যাচগুলোর একটি হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে দ্বৈরথটা। পর্তুগাল-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটার কেতাবি নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাটল অব নুরেমবার্গ।’

ওই ম্যাচে রেফারি ইভানোভ ভেলেন্টিনকে ২০ বার কার্ড বেড় করতে হয়েছে পকেট থেকে। চারটি লাল কার্ডের পাশাপাশি ওই ম্যাচের ফুটবলাররা দেখেছিলেন ১৬টি হলুদ কার্ড। শুধু এই ম্যাচই নয় পুরো আসরের ম্যাচগুলো পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল রেফারিদের। খেলোয়াড়রা শরীরনির্ভর ফুটবলের আশ্রয় নিয়েছিলেন আসরটিতে।

জার্মানি বিশ্বকাপে রেকর্ড (সর্বোচ্চ) ৩৪৫টি হলুদ কার্ড ও ২৮টি লাল কার্ড দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। বহুল আলোচিত বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫ গোল করে গোল্ডেন বুট পেয়েছিলেন জার্মান কিংবদন্তি মিরোস্লাভ ক্লোসা। তবে আসরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল পেয়েছিলেন জিদান।

বিশ্বকাপের আঠারতম আসরের বাছাইপর্বটাও রোমাঞ্চ জাগিয়েছিল। ৩১টি টিকিটের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়েছে ১৯৮টি দেশকে। বাছাইপর্বে ঘটন-অঘটনের শেষ ছিল না। এই বিশ্বকাপ দিয়ে অভিষেক হয় আট দলের। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক ছিল ঘানার নক আউট পর্বে উঠে যাওয়া। সবমিলিয়ে আসরটা ছিল রোমাঞ্চে ভরপুর। এমন একটি আসরে জিদানের ওই কাণ্ড গোটা দুনিয়াকে অবাক করেছিল।

একনজরে ২০০৬ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: জার্মানি
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি
রানার্সআপ: ফ্রান্স
তৃতীয়স্থান: জার্মানি
অংশগ্রহণ: ৩২টি

ভেন্যু: ১২টি (১২ শহর)
মোট ম্যাচ: ৬৪টি
মোট গোল: ১৪৭টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ২.৩০টি
গোল্ডেন বুট: মিরোস্লাভ ক্লোসা (৫ গোল, জার্মানি)

উদীয়মান সেরা: লুকাস পোডলস্কি (জার্মানি)
ফেয়ার প্লে পুরস্কার: ব্রাজিল ও স্পেন
গোল্ডেন বল: জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)
গোল্ডেন গ্লাভস: জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি)

মোট দর্শক: ৩৩৫৯৪৩৯
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৫২৪৯১

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.