আলোকিত মুফতার গল্পটা অনুপ্রেরণার
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
তারুণ্যের গণ্ডিতে এখনো পা পড়েনি। আছেন কৈশরের প্রান্তসীমায়। অথচ এই বয়সেই অনেককিছুই করে ফেলেছেন। হয়েছেন কাতারের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা। মালিক হয়েছেন একটি আইসক্রিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি শাখা আছে। যেখানে কাজ করেন ৬০ জন কর্মচারী ও পাঁচজন কর্মকর্তা।
হলিউড কিংবদন্তি মরগান ফ্রিম্যানের সঙ্গে ঘানিম আল মুফতাহ
বলা হচ্ছে, একটা অনুপ্রেরণার গল্প। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন একজন মানুষের স্বপ্নযাত্রার কথা। যার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। দুই পা-বিহীন সেই মানুষটার নাম গানিম আল মুফতাহ। গত রবিবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা গেল তাকে।
বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা মরগান ফ্রিম্যান অবেগ আর ভালোবাসায় বসে পড়লেন মঞ্চে। পা-বিহীন কিশোরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন সদালাপে। তাদের অভিব্যক্তি দেখে কে বলবে সেদিনই দুজনের পরিচয় হয়েছে! প্রতিবন্ধী মানুষটিকে দেখে হয়তো গোটা বিশ্বই চমকে গিয়েছিল!
মুফতার সাফল্যে বাধা হতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা
খুব স্বাভাবিকভাবেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলাদাভাবে প্রায় সবার কৌতুহলের মধ্যেমণি ছিলেন মুফতাহ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার পথচলা ও সাফল্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বোঝার বয়সের পর থেকেই জীবন-যুদ্ধের সূচনা তার। জন্ম হয়েছে কাতারে। বেড়ে ওঠাও সেখানে।
১৫ বছর বয়সী মুফতাহর একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এখানেই থামতে চান না। তিনি ছুঁতে চান আকাশ; উড়তে চান ডানা মেলে। একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। সেটা অবশ্য আলোকবর্ষ দূরের পথ। আপাতত ব্যবসা সম্প্রসারণের ভাবনা মুফতাহর।
সমগ্র পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার পরিকল্পনা আছে তার। মুফতাহ কেবল একজন ব্যবসায়ী নন, ছাত্রও বটে! তার লক্ষ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা। এই কিশোরের আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি একজন কাতারি ইউটিউবার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইন্সটাগ্রামে তার জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে। যেখানে তার এক মিলিয়নের বেশি অনুসারী আছে। শারীরিকভাবে সাধারণ মানুষের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অদম্য মানসিকতায় নিজেকে অনেক দূর নিয়ে গেছেন তিনি। চড়েছেন উপসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জেবেল শামস-এ।
মুফতাহ পরোপকারী। বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেখানে তুলে ধরা হয় তার জীবনের গল্প ও মানবিক অনেক দিক। খেলাধুলার প্রতিও প্রবল আগ্রহ আছে এই উদ্যোক্তার; স্বপ্ন দেখেন প্যারা অলিম্পিয়ান হওয়ার।
ফুটবল, সাঁতার, স্কেটবোর্ডিং, স্কুবা ডাইভিং ও হাইকিং খেলা তার পছন্দ। পা না থাকলেও ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছে তার। হাতে জুতা পরে ফুটবল খেলতেন। গোল করার নজিরও গড়েছেন তিনি। অদম্য মানসিকতা আর আত্মবিশ্বাসী মুফতাহ যেতে চান বহুদূর। উঠতে চান আরও উচ্চতায়। কতটা? মুফতাহ স্বপ্ন দেখেন একদিন উঠে যাবেন মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়!
মুফতার একজন জমজ ভাই আছেন। তিনি অবশ্য জন্ম থেকেই পরিপূর্ণ একজন মানুষ। কিন্তু মুফতাহ জন্মের সময় ‘কডাল রিগ্রেশন সিন্ড্রোম’ নামক বিরল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হন। এই অবস্থায় একজন মানুষের বেঁচে থাকাটাই বড় স্বার্থকতা। সেখানে মুফতাহ হয়ে উঠেছেন অনন্য, আলোকিত এক মানুষ।
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর