স্পেনে জন্ম হয়েছিল তার, চাইলেই খেলতে পারতেন স্পেন জাতীয় দলে। সুযোগ এসেছিল বটে, কিন্তু জন্মভূমি ছেড়ে আশরাফ হাকিমি বেছে নিয়েছেন বাপ-দাদার দেশ মরক্কোকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২৪ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার দুই দেশেরই নাগরিক!
আশরাফ হাকিমি
আজ কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে হাকিমির জন্মভূমি ও তার পিতৃভূমি। বিশ্বকাপে এমন অম্লমধুর অভিজ্ঞতা অবশ্য এবারই প্রথম নয় হাকিমির। সাড়ে চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপেও মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন ও মরক্কো।
গ্রুপপর্বের থ্রিলার সেই ম্যাচটা ২-২ গোলে অমীমাংসিত থেকে গেছে। প্রথমবার পারেনি আফ্রিকান জায়ান্টরা। এবার কাতারে এসে স্পেনকে হারাতে চায় তারা। হাকিমি স্বপ্ন দেখছেন জন্মভূমিকে হারানোর। ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আল রাইয়ানের এজুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
ম্যাচের আগে সোমবার স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কাতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রাপ্ত হাকিমি বলেছেন, ‘আমি এখন আরও পরিণত। স্পেন শীর্ষ পাঁচ দলের একটি এবং নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলে। তবে আমাদের কোচও অমাদের মধ্যে জয়ের মানসিকতা গড়ে তুলেছেন। প্রতিপক্ষ কে বা কারা আমরা এসব নিয়ে ভাবি না। আমরা কেবল আমাদের খেলাটা খেলব এবং তাদের হারাতে চেষ্টা করব।’
স্পেন যুবদল থেকে ডাক এসেছিল, কিন্তু হাকিমি যোগ দেন মরক্কো যুবদলে। সেখানকার সংস্কৃতির প্রতি দুর্বলতাই এর প্রধান কারণ, হাকিমি বলেছেন, ‘এটা (স্পেন) আমার জন্য সঠিক জায়গা ছিল না। আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। মরক্কোয়ান হওয়ায় আরব সংস্কৃতি আমার আপন ছিল। অন্য বিশেষ কোনো কারণ ছিল না।’
হাকিমের সাফল্যের গল্পটা অনুপ্রেরণার। একটু ভালো থাকার আশায় তার বাবা-মা পাড়ি জমান স্পেনে। সেখানে রাস্তায় ফেরি করে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করতেন তারা, কাজ করতেন বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে। ১৯৯৮ সালে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে তাদের অভাবের সংসারে জন্ম নেন হাকিমি।
তাকে ফুটবলার হিসেবে তৈরি করতে শুরু থেকেই মনোযোগ দেন পিতা-মাতা। মাত্র সাত বছর বয়সে হাকিমিকে পাঠান রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমিতে। প্রতিভার জোরেই সেখানে টিকে যান ছোট্ট হাকিমি। রিয়ালের একাডেমি থেকে ধীরে ধীরে পেশাদার ফুটবলার হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৭ সালে ক্লাবের মূল দলেও অভিষেক হয়ে যায় তার।
এরপর দুই বছর জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে ধারে খেলেন হাকিমি। পরে রিয়ালের কাছ থেকে পাকাপাকিভাবে তাকে কিনে নেয় ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান। গত বছর মরক্কান এই ডিফেন্ডার যোগ দেন ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে (পিএসজি)। সেখানে ক্লাবের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন তিনি।
ক্লাব ফুটবলে পারফরম্যান্সে ছাপটা জাতীয় দলেও দেখিয়ে চলেছেন হাকিমি। মরক্কো যে এবারের বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে উঠল সেখানে তার অবদান অসামান্য। গ্রুপপর্বে প্রথম ম্যাচে মরক্কো গোলশূন্য ব্যবধানে রুখে দেয় ক্রোয়েশিয়াকে। পরের ম্যাচে বেলজিয়ামকে হারিয়ে আরও বড় চমক দেখায় তারা।
শেষ পর্যন্ত কানাডার বিপক্ষে জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নক আউট পর্বে ওঠে মরক্কো। দলটির ডিফেন্ডার হাকিমি এবার স্বপ্ন দেখছেন আরও একটি অঘটন ঘটানোর, ‘আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমরা কিছুটা হলেও সম্মান প্রাপ্য। আমাদের কিছুটা হলেও ভয় পেতে হবে। স্পেন সেটা জানে। আমরা কি আবার চমক দেখাতে পারি না?’