‘অপয়া’ গোল্ডেন বল

গোল্ডেন বুট দেওয়ার রীতিটা আগে থেকেই ছিল। ১৯৮২ সালে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে যুক্ত করা হয় ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের আরেকটি পুরস্কার তথা গোল্ডেন বল। শুরুর দুটি আসর ঠিকঠাকই ছিল। চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়রা পেয়েছিলেন সোনার বল।

গোল্ডেন বল

এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জিতবেন কোন ফুটবলার? প্রশ্নটা বোধহয় একটু তাড়াতাড়িই হয়ে গেল। তবে প্রশ্নটা একেবারেই অমূলক নয়। বিশ্বকাপে গোল্ডেন বলজয়ীদের সাম্প্রতিক ইতিহাস যে ভালো নয়! ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের এই পুরস্কার যেন একটা অভিশাপ।

বিশ্বকাপের সাম্প্রতিক ইতিহাস অন্তত তাই বলছে। যে খেলোয়াড় গোল্ডেন বল পেয়ে থাকেন তার দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না বিশ্বকাপে। রেওয়াজটা চালু হয়েছে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ থেকেই। যা রাশিয়ার বিশ্বমঞ্চেও অব্যাহত ছিল। সবশেষ ছয় আসর ধরে চ্যাম্পিয়ন দলের কেউ হতে পারছেন না টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়।

এ পর্যন্ত ১০টি আসরের মধ্যে তিনটিতে গোল্ডেন বল জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন দলের কোনো খেলোয়াড়। এর মধ্যে আছে প্রথম দুটি আসর। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইতালির পাওলো রসি এবং ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে ওঠে সেরা খেলেয়াড়ের মুকুট। বিপত্তি বাঁধে পরের আসরেই।

১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হলেও গোল্ডেন বল জেতেন ইতালির সালভেটর শিলাচি। আজ্জুরিরা ওই আসরের ফাইনালও খেলতে পারেনি। তৃতীয় সেরা দল হয় ইতালি। পরবর্তী আসরে যথারীতি চ্যাম্পিয়ন দল ব্রাজিলের রোমারিও জেতেন গোল্ডেন বল। চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়ের হাতে সেরার মুকুট ওঠা সেবারই শেষ।

এরপর টানা ছয় আসরের পাঁচবারই গোল্ডেন বল পেয়েছেন রানার্সআপ দলের খেলোয়াড়। ব্যতিক্রম হয়েছে কেবল ২০১০ বিশ্বকাপে। ডিয়েগো ফোরলান গোল্ডেন বল জিতেছেন বটে, কিন্তু ফাইনালে উঠতে পারেনি তার দল উরুগুয়ে। টুর্নামেন্টের চতুর্থ সেরা হয় তার দল।

এবারের বিশ্বকাপ এখনো সেমিফাইনালে গড়ায়নি। কিন্তু ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কারণ কোয়ার্টার ফাইনালের ধাপটি গোল্ডেন বলের ভাগ্য নির্ধারণে প্রাথমিক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফোরলান এবং সালভেটরকে দেখলেই তা বোঝা যায়। তবে এটা নিশ্চিত শেষ চারে ওঠা চার দলের কারোর হাতে উঠতে পারে এই ট্রফি।

এবারের আসরে গোল্ডেন বলের দাবিদার অনেকেই। তবে পারফরম্যান্সের নিরিখি শেষ ষোলোর রাউন্ড পর্যন্ত সেরা খেলোয়াড়ের লড়াইয়ে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, লিওনেল মেসি, ফিল ফোডেন, জুডে বেলিংহাম, ডেনজেল ডামফ্রিজ, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, নেইমার জুনিয়র, ক্যাসেমিরো, ফিল ফোডেন, লুকা মডরিচ, ইয়াসিন বুনু, হ্যারি কেনের মতো ফুটবলাররা।

নিশ্চিতভাবেই তারা প্রথাটা ভাঙতে চাইবেন। দলীয় শিরোপা এবং ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দুটোই জয়ের আশা তাদের। যদিও ইতিহাস এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে তাতে দুটো এক সঙ্গে জেতা কঠিন। তবে শেষ আটের চার লড়াই শেষে এ বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

একনজরে গোল্ডেন বলজয়ী খেলোয়াড় ও দলের সাফল্য:

১৯৮২ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি
গোল্ডেন বল: পাওলো রসি (ইতালি)

১৯৮৬ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: আর্জেন্টিনা
গোল্ডেন বল: ডিয়েগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা)

১৯৯০ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: জার্মানি
গোল্ডেন বল: সালভেটর শিলাচি (ইতালি, তৃতীয়)

১৯৯৪ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: ব্রাজিল
গোল্ডেন বল: রোমারিও (ব্রাজিল)

১৯৯৮ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: ফ্রান্স
গোল্ডেন বল: রোনালদো (ব্রাজিল, রানার্সআপ)

২০০২ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: ব্রাজিল
গোল্ডেন বল: অলিভার কান (জার্মানি, রানার্সআপ)

২০০৬ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি
গোল্ডেন বল: জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স, রানার্সআপ)

২০১০ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: স্পেন
গোল্ডেন বল: ডিয়েগো ফোরলান (উরুগুয়ে, চতুর্থ)

২০১৪ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: জার্মানি
গোল্ডেন বল: লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা, রানার্সআপ)

২০১৮ বিশ্বকাপ:
চ্যাম্পিয়ন: ফ্রান্স
গোল্ডেন বল: লুকা মডরিচ (ক্রোয়েশিয়া, রানার্সআপ)