মরক্কোর আসল হিরো এরাই!

ইতিহাসে প্রথম উত্তর আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কো। গত শনিবার ১-০ গোলের ব্যবধানে পর্তুগালকে হারিয়ে অবিশ্বাস্য এ কৃতিত্ব অর্জন করে অ্যাটলাস লায়ন্স। স্টেডিয়ামের ভেতরে বাইরে, নিজ দেশে দেশটির হাজারো সমর্থক খেলাটি উপভোগ করে। কিন্তু এক মরক্কান নাগরিক ওই দিন স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েও খেলা দেখেননি, তিনি খেলা দেখেননি দায়িত্ববোধের কারণেই।

ফাখরুদ্দিন ডেরউইচ

কাতার বিশ্বকাপে গত শনিবারের খেলায় ৪২ মিনিটে পর্তুগালের জালে বল জড়ায় মরক্কো। সতীর্থদের কাছ থেকে ভেসে আসা বলে পর্তুগালের গোলরক্ষক কস্তা ও রুবেন দিয়াজের ওপর দিয়ে লাফিয়ে উঠে হেড নেন ইউসেফ নেসেরি, তাতেই বল জড়িয়ে যায় পর্তুগিজদের জালে। আল থুমামা স্টেডিয়ামে খেলার শেষ পর্যন্ত এটিই ছিল স্কোর। ১-০ গোলের জয় নিয়ে দলের সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হয় ইতিহাসের প্রথমবারের মতো।

স্টেডিয়ামের কোণায় কোণায় সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সে আনন্দ যাতে অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, কোনো ধরনের সংঘাতে পরিণত না হয় তা দেখার জন্য দায়িত্ব চেপেছিল ফখরুদ্দিন ডেরউইচসহ আরও কয়েকজনের কাঁধে। ফখরুদ্দিন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

পুরো ম্যাচে দর্শকদের দিকে লক্ষ্য রাখা ছিল তাদের দায়িত্ব। এ কারণে মাঠকে পেছনে ফেলে তারা ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন দর্শকের দিকে তাকিয়ে। যতই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিই হোক না কেন পেছনে তাকিয়ে দেখেননি তিনি। তবে যখন শেষ পর্যন্ত দল সেমিফাইনালে উঠে যায়, তখন নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারেননি। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নার মধ্য দিয়ে উৎযাপন করে দলের সাফল্য।

ফখরুদ্দিনের এমন দায়িত্ববোধ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। অনেকে বলেছেন, এরাই আসল হিরো। নিজের ইচ্ছেকে চেপে রেখে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।

তার দায়িত্ব পালনের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা তার প্রশংসায় মাতেন। মোহাম্মদ ফাহাদ কামাল নামের একজন মন্তব্য করেন, আসল নায়ক ছিলেন মরক্কোর এই মানুষেরা। তার দেশ মাঠে ঐতিহাসিক এক খেলায় নেমেছিল। কিন্তু আমাদের নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠকে তার পিঠ দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মরক্কো জিতলে তার মুখে কান্না নেমে আসে।

১৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে মরক্কো। বাংলাদেশ সময় রাত একটায় এ খেলা অনুষ্ঠিত হবে।