শূন্য হাতে মডরিচের বিদায়
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
আরও একটা নক্ষত্রের পতন! শেষটা রাঙানো আর হলো না লুকা মডরিচেরও। গতবারের আক্ষেপের সঙ্গে যোগ হলো আরেকটি হতাশা। হলো না শিরোপা ছোঁয়া। মাঝমাঠের ফুটবল শিল্পীর বিদায় হলো কোনো আন্তুর্জাতিক ট্রফি ছাড়াই! মডরিচ যেন রাজ্যপাট ছাড়া একজন রাজা। তিনিও চলে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ইয়োহান ক্রুইফ, ফেরেঙ্ক পুসকাসদের কাতারে।
কাতার বিশ্বকাপ থেকে ক্রোয়েশিয়ার বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে সেমিফাইনালের ৬৯ মিনিটে। যখন লিওনেল মেসির দুর্দান্ত একটা অ্যাসিস্ট থেকে স্কোর লাইন জুলিয়ান আলভারেজ স্কোর লাইন ৩-০ করে ফেলেছিলেন! তাতে ফেরার ক্ষীণ আশাটাও শেষ হয়ে গেল ক্রোয়াটদের। একই সঙ্গে স্বপ্নের সমাধী হয়ে গেল এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারের।
মঙ্গলবার রাতে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৮১ মিনিটে মডরিচ যখন মাঠ ছেড়ে যাচ্ছিলেন তখন গ্যালারির দর্শকেরা তাকে প্রাপ্য সম্মানটাই দিয়েছেন। কুর্নিশ জানিয়েছেন ক্রোয়েশিয়া অধিনায়ককে। কারণ দেশ তো আর কম দেননি তিনি। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে দিয়েছেন অনেক বড় বড় জয়।
সেরা সাফলট্য প্রায় সাড়ে চার বছর আগের রাশিয়া বিশ্বকাপে। প্রথমবারের মতো দলকে মডরিচ এনে দেন ফাইনালের টিকিট। নিঃসন্দেহে ওই স্বপ্নযাত্রায় সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখেন নাম্বার টেন। দেশে জার্সিতে অনিন্দ্য সুন্দর ফুটবলে এটাই হয়তো তার গোধুলিলগ্ন হয়ে গেল। হয়তো আগামী শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শেষবার তিনি মাঠে নামবেন।
কিন্তু ওই ম্যাচের খবর কয়জনই বা রাখবেন। আদতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষেই যে শেষ হয়ে গেলো ৩৭ বছর বয়সী এই ফুটবল শিল্পীর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কারণ স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। হারা ম্যাচে ডাগ আউটে তার বিষণ্ন মুখটা বলে দিচ্ছিল কতটা হতাশ সর্বকালের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডার। মডরিচ বুঝে গেছেন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের ইতি এখানেই হয়ে গেছে।
শেষ বাঁশি বাজার পর মডরিচ পাশে পেয়েছেন আরেক কিংবদন্তিকে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা এবং বিশ্বকাপ শিরোপা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে আসার এই যন্ত্রণা লিওনেল মেসির চেয়ে আর কে ভালো জানেন! ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে আর্জেন্টিনা হেরেছিল জার্মানির কাছে। পরেরবার ফ্রান্সের গতির ঝড়ে উড়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্ন। মডরিচ আর মেসির দুঃখটা যে এখন পর্যন্ত একই।
ম্যাচ শেষে মেসি এসে জড়িয়ে ধরেন মডরিচকে। ক্লাব ফুটবলের এক সময়কার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে সান্ত্বনা দেন মেসি। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে সুন্দর ছবিটা বোধহয় এটাই। মডরিচকে সান্ত্বনা দিতে চলে এলেন তার পুরোনো ক্লাব সতীর্থ অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াও। গতবারের গোল্ডেন বলজয়ী এই তারকাকে বুকে জড়িয়ে নেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার।
মডরিচের পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল স্বদেশি ক্লাব ডায়নামো জাগরেবের জার্সিতে। ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে ক্রোয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ফুটবল লিগ জয়ে তার অবদান ছিল অনেক। তাকে দলে টেনে যে ক্রোয়াট ক্লাবটি ভুল করেনি সেটার প্রমাণ ভালোভাবেই দিলেন মডরিচ। ওই মৌসুমে ৩১ ম্যাচে সাত গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন অনেক গোল।
যা জাগরেবের লিগ শিরোপা জয়ে রাখে বড় ভূমিকা। ক্লাবটির হয়ে চার বছরের ক্যারিয়ারে মডরিচ গোল করেন ৩১টি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট ২৯টি। এরপর ইংলিশ ক্লাব টটেনহাম হটস্পারে নাম লেখান তিনি। কিন্তু লন্ডনের ক্লাবে এসে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন মডরিচ। চোট তার পথচলায় বারবার দাঁড়ায় বাধা হয়ে। স্পার্সদের হয়ে ১২৭ ম্যাচে ১৩ গোলেই শেষ হয় তার অধ্যায়।
ক্রোয়েশিয়ান ‘এলএমটেন’ সেরা সময়টা কাটিয়েছেন স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। ২০১২ সালে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পা রাখার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। রিয়াল মাদ্রিদে এখন চলছে তার দশম মৌসুম। মাঝের এই সময়টাতে নিজেকে বিশ্বসেরা প্লে-মেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন তিনি। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে এবং ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে মডরিচ হানা দেন মেসি-রোনালদোর রাজত্বে। ২০১৮ সালে জেতেন বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর।
কেবল কালকের সেমিফাইনালই নয়, ক্যারিয়ারে বড় একটা সময়জুড়ে মেসিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মডরিচ। যেখানে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনের লড়াইটার বোধহয় এখনও অমীমাংসিত থেকে গেল। গত বিশ্বকাপে যে মেসিকে ম্লান করে আপন আলোয় আলোকিত হয়েছিলেন তিনি। সেই মেসি-জাদুই থাময়ে দিল মডরিচকে।
অথচ তারা দুজন হতে পারতেন সতীর্থ। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুর দিকটায় স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন মডরিচ। নয়তো বা অন্তত ক্লাব ফুটবলে এই দুই মহাতারকাকে দেখা যেত কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করতে। ক্লাব আঙিনার সেই বৈরিতা আরও একবার দেখা গেল বিশ্বমঞ্চেও। যেখানে একজনকে বিদায় নিতেই হতো। এখানেই ফুটবল নিষ্ঠুর।
ফুটবলের এই একটা রীতি। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ওঠে একজনের মাথাতেই। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় দুজনকেই তাই টিকে থাকতে লড়াই করতে হলো। মডরিচের স্বপ্নের সমাধী হলো মেসির হাতেই। আপাতত বেঁচে থাকল আর্জেন্টিনা অধিনায়কের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত সেটা সত্যি হবে তো? নাকি রোনালদো-মডরিচের মতো মেসিও হয়ে যাবেন দুঃখী রাজপুত্র। উত্তরটা মিলে যাবে রবিবারের ফাইনালেই।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.