স্বপ্ন থেকে এক পা দূরে

ক্যারিয়ারে পড়ন্ত বিকেলে দাঁড়িয়ে লিওনেল মেসি তৃপ্তি পাবেন সেটাই স্বাভাবিক। কারণ দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার অর্জনের খাতাটা বেশ ভারী। ক্লাব পর্যায়ে বার্সেলোনার হয়ে খেলে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়েও জিতেছেন একাধিক শিরোপা। এতোকিছুর পরও তৃপ্তির পাশে এখনও ‘পরিপূর্ণ’ শব্দটি জুড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করতে পারেননি মেসি।

ফাইনাল শেষে এমন মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখার অপেক্ষায় আছে কোটি প্রাণ

একজন ফুটবলারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন কোনটা? এই প্রশ্নে একবাক্যে বিশ্বকাপের নামটাই উচ্চারিত হবে সবার মুখে। অথচ ১৮ বছরের দীর্ঘ পথচলায় একবারের জন্যও সেই বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে পারেননি মেসি। এজন্য মেসির আক্ষেপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি ভক্ত সমর্থকদের চাপা আর্তনাদ তো আছেই। অনেকে তো প্রায়ই বলেই বসেন, মেসির হাতে এই আরাধ্য বিশ্বকাপ না উঠলে ফুটবল তার দায় মেটাতে পারবে না।

যদিও বিষয়টি নিয়ে সব আলোচনা থেমে যাওয়ার সুযোগ আসে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে। সেবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলে আর্জেন্টিনা। তবে জার্মানির কাছে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে স্বপ্নভঙ্গ হয় লা আলবিসেলেস্তেদের। সেই সাথে স্বপ্নভঙ্গ হয় কোটি ফুটবল ভক্তের। ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে সেদিন ফাইনাল শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিরোপার কাছে গিয়ে আড় চোখে মেসির চাহুনির কথা আজও ভুলতে পারেননি ফুটবলপ্রেমীরা।

ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর কেটে গেছে আট বছর। এরপরও হয়তো ব্রাজিল বিশ্বকাপের শোক স্মৃতির কথা ভেবে নিরবে মন খারাপ করে বসে থাকেন মেসি। হয়তো ভাবেন সেদিন জার্মানির বিপক্ষে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়তে পারলে কতই না ভালো হতো। তবে ভাগ্যবিধাতার ওপর তো আর কারও হাত নেই। এটা ভেবে হয়তো আবার পরক্ষণেই সব দুঃখ ভুলে যান মেসি।

যদিও পুরনো সে দুঃখে প্রলেপ দেওয়ার মতো আরও একটি সুযোগ পেয়েছেন মেসি। চলমান কাতার বিশ্বকাপে সমর্থকদের প্রত্যাশার বেলুন উড়িয়েই চলেছে আর্জেন্টিনা। ইতোমধ্যে প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। মেসি এবার চাইবেন পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি না করে অধরা বিশ্বকাপকে ছুঁয়ে দেখতে।

দলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত দুর্দান্ত ফর্ম মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্নের পালে বাড়তি হাওয়া দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে পাঁচবার নিশানাভেদ করেছেন সাবেক বার্সেলোনা অধিনায়ক। এছাড়া সতীর্থদের আরও কয়েকটি গোলে রেখেছেন দারুণ অবদান। সব মিলিয়ে দায়িত্বের সেরাটাই দিচ্ছেন তিনি।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মরক্কোর বিপক্ষে মাঠে নামবে ফ্রান্স। আসন্ন ম্যাচের বিজয়ী দলের সাথে আগামী ১৮ ডিসেম্বর শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য সে ম্যাচে মেসির মুখে শেষ হাসি দেখার অপেক্ষায় আছেন সমর্থকরা। তবে আরও একবার মারাকানার দুঃস্মৃতি ফিরে এলে ক্যারিয়ার ব্যাখ্যায় তৃপ্তির আগে ‘পূর্ণ’ শব্দটি ব্যবহার করতে কষ্ট হবে মেসির।