ফ্রান্সে থামল মরক্কো রূপকথা

অবশেষে থেমে গেল মরক্কো রূপকথা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে এসে শেষ হলো বিস্ময়কর এক যাত্রা। বুধবার রাতে কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফরাসিদের কাছে ২-০ গোলে হেরে গেল আফ্রিকান জায়ান্ট দলটি। এই জয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখার শেষ ধাপে চলে এলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে অ্যান্ড কোং।

মরক্কোর বিপক্ষে ফ্রান্সের গোল উদযাপন

আল বায়েত স্টেডিয়ামে ফেভারিট হিসেবে জয় দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল দিদিয়ের দেশামের দল। সবশেষ ১৯৯৮ সালে পরপর দুটি ফাইনাল খেলেছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ফরাসিদের সামনে এখন ব্রাজিল ও ইতালির টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসানোর হাতছানি।

আগামী রোববার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। মঙ্গলবার রাতে প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠেছিল ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টরা। অপেক্ষা এখন রোমাঞ্চকর ফাইনালে। তবে শনিবার সান্ত্বনার তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো।

পুরো ম্যাচে ফ্রান্সের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে মরক্কো। স্রেফ অভিজ্ঞতায় মার খেয়েছে তারা। সেমিফাইনালের স্নায়ুচাপটা নিতে পারেনি আফ্রিকান জায়ান্টরা। ম্যাচে ফ্রান্স ১৪টি এবং মরক্কো গোলের উদ্দেশ্যে শট নিয়েছে ১৩টি। লড়াই কতটা জমজমাট হয়েছে তা বলে দিচ্ছে এই তথ্যটাই।

ফ্রান্স তিনটি শট রেখেছিল গোলমুখে। যার দুটিতেই এসেছে সাফল্য। লক্ষ্যে তিনটি ছিল মরক্কোরও। যদিও গোল পায়নি তারা। ম্যাচ শুরুর বাঁশির পঞ্চম মিনিটে থিও হার্নান্দেজের দারুণ এক শটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম মরক্কোর জালে বল পাঠালেন প্রতিপক্ষের কোনো ফুটবলার। এর আগে গ্রুপপর্বে কানাডার বিপক্ষে তারা একটি গোল হজম করলেও সেটি ছিল আত্মঘাতী।

ম্যাচের শুরুতে গোল হজমের পর সেটার আর শোধ দিতে পারেনি মরক্কো। পুরো ম্যাচে ৬২ শতাংশ বল রেখে বেশি আক্রমণের সুযোগ করেও সমতায় ফিরতে পারেননি হাকিমি-জিয়াচরা। উল্টো ৭৯ মিনিটে প্রতি আক্রমণে দ্বিতীয় গোলটি হজম করে বসে মরক্কো। ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রান্ডাল কোলো মুয়ানি।

এই গোলটার মূল কৃতিত্ব অবশ্য এমবাপ্পের। দারুণ এক ড্রিবলিংয়ের পর মরক্কান ডিফেন্ডারদের জটলার ফাঁক গলে পিএসজি সুপারস্টার যে অ্যাসিস্ট করেছেন সেটা অনেক দিন চোখে লেগে থাকার মতোই। বহুবছর মনে থাকবে মরক্কোর এই দুর্দান্ত যাত্রার কথাও। এবারের বিশ্বকাপে তারাই ছিল সবচেয়ে বড় চমক।

গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে গত আসরের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দেয় মরক্কো। পরে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামকে হারিয়ে দেয় তারা। ইউরোপিয়ান দুই জায়ান্টকে টপকে গ্রুপ সেরা দল হিসেবে নক আউট পর্বে ওঠে আরব দেশটি। এখানেও চমক অব্যাহত থাকল। প্রথমে স্পেন এরপর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে বিদায় করে মরক্কানরা।

চার ইউরোপিয়ান জায়ান্টের বিপক্ষে অজেয় থাকলেও ফ্রান্সের কাছে এসে থামতে হলো তাদের। তাই বলে বাজে খেলেনি মরক্কো। পুরো ম্যাচে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে তারা। হয়তো গোলটাই পাননি হাকিমি-জিয়াচরা। তবু যতটুকু হয়েছে তাতেই অনেক খুশি মরক্কো। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার গৌরব নিয়েই বাড়ি ফিরছে তারা।

মরক্কানদের বিদায় করে তৃতীয় শিরোপার আরও কাছে এসে চলেছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথমবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এরপর দেশের বাইরেই ট্রফি জেতে ফরসিরা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে কাঁদিয়ে স্বপ্নপূরণ করে দেশামের দল। সবমিলিয়ে সাত বিশ্বকাপের মধ্যে চারটি ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে ফ্রান্স।