মেসির বিরল কীর্তি, ম্যারাডোনা পেলে জিদান কারও নেই

স্বপ্নটা বারবার উঁকি দিচ্ছিল। সঙ্গে আশঙ্কাও চেপে বসেছিল ভালোভাবেই। শেষপর্যন্ত আর্জেন্টিনা শিরোপা জিততে পারবে তো? এমন দুশ্চিন্তার কারণটা ছিল যৌক্তিক। প্রথমার্ধে দুই গোলের লিড নেওয়ার পরও যে নির্ধারিত সময়ের খেলায় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া যায়নি!

মেসির বিরল কীর্তি

৯০ মিনিটের খেলা শেষে ম্যাচ ২-২ সমতা। দ্বিতীয়ার্ধে কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোলের ওপর দাঁড়িয়ে সমতায় ফেরে ফরাসিরা। অতিরিক্ত সময়েও জমে উঠল নাটক। লিওনেল মেসির গোলে ফের এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এবারও হাতছাড়া হয়ে গেল জয়।

ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আবারও ফ্রান্সের ত্রাণকর্তা হয়ে উঠলেন এমবাপ্পে। করলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক। কিন্তু শেষপর্যন্ত বিফলে গেল এমবাপ্পের তিন গোলের নৈপুণ্য। টাইব্রেকে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বীরত্বে বাজিমাত করে আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৪-২ গোলে জিতে বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা হাতে তোলে ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টরা।

আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণের মহানায়ক লিওনেল মেসি। কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে মিশন শুরু করেও রূপকথার একটা সমাপ্তি টানলেন তিনি। নক আউট পর্বের প্রতিটি ধাপে গোল করা মেসি ফাইনালেও দুবার খুঁজে নিলেন জালের ঠিকানা।

গোল্ডেন বুটের লড়াইয়েও এগিয়ে গিয়েছিলেন এমবাপ্পের চেয়ে। কিন্তু হ্যাটট্রিক করা এমবাপ্পের গোল হয়ে যায় আটটি। মেসির একটি কম। তাই গোল্ডেন বুট জয়ের সান্ত্বনা পেয়েছেন এমবাপ্পে। ফাইনালে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা মেসির হাতে উঠেছে গোল্ডেন বল। সঙ্গে বহু অরাধ্যের ধন সোনালি ট্রফিটাও।

ম্যাচে আর্জেন্টিনার প্রথম এবং শেষ গোল করেছেন মেসি। তার ডাবলস নৈপুণ্যের পরও স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষাই দিতে হলো আর্জেন্টিনাকে। শেষ লগ্নে বড় পরীক্ষাটা দিতে হয়েছে গোলরক্ষক মার্টিনেজকে। টাইব্রেকে তিনিই তো দলকে জিতিয়েছেন। মার্টিনেজের হাতে উঠেছে গোল্ডেন গ্লাভসের ট্রফি।

কিন্তু সব আলো গিয়ে পড়ল মেসির দিকে। কাতারের ক্রাউন প্রিন্সের হাত থেকে মেসি যখন গোল্ডেন বলের ট্রফিটা নিচ্ছিলেন তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল তাকে। যাওয়ার সময় স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফিতে একটা চুমু এঁকে দিয়ে গেছেন মেসি। মরুর বুকে এই বিশ্বকাপের ট্রফির একমাত্র দাবিদার যে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন!

অথচ সাড়ে আট বছর আগে মেসির হাতে যখন গোল্ডেন বলের ট্রফিটা উঠেছিল তখনও অশ্রুসিক্ত ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ ট্রফিটার পাশ দিয়ে মেসি হেঁটে যাওয়ার সময় তার মুখের দিকেই তাকানো যাচ্ছিল না। ইতিহাস ঠিকই পাল্টে গেল এবার। মেসির হাতে উঠল বিশ্বজয়ের মুকুট।

সঙ্গে গোল্ডেন বলও। আসরে সাত গোল এবং চারটি অ্যাসিস্টের বাড়তি পুরস্কার পেলেন তিনি। এরচেয়ে দারুণভাবে শাপমোচন করতে পারতেন না মেসি। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক এখন অবসরে যেতে পারেন মাথা উঁচু করেই। সবর্কালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের গৌরবও হচ্ছে বিদায়বেলায় তার সঙ্গী।

কারণ দুটি গোল্ডেন বল জিতলেন তিনি। সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার সেটিরই যেন পুনরাবৃত্তি হলো। ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে দুবার গোল্ডেন বল পেলেন তিনি। যেটি নেই ম্যারাডোনা, পেলে, জিদানের মতো মহাতারকাদেরও।